পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( : " ) জন্যে অন্য স্থান নির্দেশ করে দিলে, সে তাতে সতেজে মাথা নেড়ে কোলের উপর ফুটি হাত জড় করে নড়েচড়ে আবার বেশ গুছিয়ে বসল—তখন সেই ছেলেটা শারীরিক যুক্তি প্রয়োগ করতে আরম্ভ করলে এবং অবিলম্বে কৃতকাৰ্য্য হল । আবার অভ্ৰভেদী আনন্দধবনি উঠল, পুনৰ্ব্বার মাস্তল গড়াতে লাগল—এমনকি, খানিকক্ষণ বাদে মেয়েটাও তার নারীগৌরব এবং সুমহং নিশ্চেষ্ট স্বাতন্ত্র্য ত্যাগ করে কৃত্রিম উৎসাহের সঙ্গে ছেলেদের এই অর্থহীন চপলতায় যোগ দিলে । কিন্তু বেশ বোঝা যাচ্ছিল সে মনে মনে বলছিল—ছেলেরা খেলা করতে জানে না, কেবল যতরাজ্যের ছেলেমানুষী । হাতের কাছে যদি একটা খোপা ওয়ালা হলুদে রঙের মাটির বেনে পুতুল থাকৃত তাহলে কি সে আর এই অপরিণতবুদ্ধি নিতান্ত শিশুদের সঙ্গে মা স্থল ঠেলার মত এমন একটা বাজে খেলায় যোগ দিত ! এমনসময় আর একরকমের থেলা তাদের মনে এল, সেটাও খুব মজার । দুজন ছেলেতে মিলে একটা ছেলের হত পা ধরে ঝুলিয়ে তাকে দোলা দেবে । এর ভিতরে খুব একটা রহস্য আছে সন্দেহ নেই— কারণ, ছেলেরা বেজায় উৎফুল্ল হয়ে উঠল । কিন্তু মেয়েটার পক্ষে অসহ্য হল । সে অবজ্ঞাভরে ক্রীড়াক্ষেত্র ত্যাগ করে ঘরে চলে গেল । হঠাৎ একটা দুর্ঘটন ঘটুল । যাকে দোলাচ্ছিল সে গেল পড়ে । সেই অভিমানে সে সঙ্গীদের ত্যাগ করে বহুদূরে গিয়ে হাতের উপর মাথা রেখে তৃণশয্যায় শুয়ে পড়ল—ভাবে এই রকম জানালে— এই পাষাণহৃদয় জগৎসংসারের সঙ্গে সে আর কোন সম্পর্ক রাখবেন, কেবল একলা চীত হয়ে শুয়ে আকাশের তারা গণনা করবে, মেঘের খেলা দেখে হাতে মাথা রেখে জীবন কাটিয়ে দেবে এবং “যাবত জীবন রবে কারে সঙ্গে খেলিব না ।” তার এইরকম অকালে পরম বৈরাগ্য দেখে বড় ছেলেট তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে কোলের উপর তার মাথাটা নিয়ে সামুনয়স্বরে অনুতাপপ্রকাশ করে বলতে লাগল, আয় না ভাই, ওঠ না ভাই লেগেছে ভাই ! অনতিকাল পরেই দুই কুকুরশাবকের মত দুজনের হাতকড়াকড়ি থেলা বেধে গেল—এবং তুমিনিট না যেতে দেখি সেই ছেলে ফের ফুলতে আরম্ভ করেছে ! এমনি মানুষের প্রতিজ্ঞ ! এমনি তার মনের বল ! এমনি তার বুদ্ধির স্থিরতা ! খেলা ছেড়ে একবার দূরে গিয়ে চীত হয়ে শোয়, আবার ধরা দিয়ে হেসে হেসে মোহদোলায় দুলতে থাকে । এ মানুষের মুক্তি কি করে হবে । এমন ক’জন ছেলে আছে যে খেলাঘর ছেড়ে মাথার হাত দিয়ে কেবল চীৎ হয়ে পড়ে থাকে—সেই সব ভালছেলেদের জন্যে গোলোকধামে বাস তৈরিহচ্চে । ly سیس-س-------سسسه