পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

বারেক দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া সঙ্গীকে বলিলেন “পাখীটি থলিতে রাখ আমি অন্যটির উদ্দেশে যাই।” বলিয়া তিনি তাঁর বেগে ছুটিলেন। যামিনী বন্ধুর কথামত মৃত পক্ষীটিকে স্কন্ধের থলিতে রাখিয়া বলিলেন—“কিন্তু প্রমোদ মনে রেখো—পাখীটি আমি মেরেছি।

 আট বৎসর পূর্ধ্বে পাবেল পাহাড়ে আমরা যে দুরন্ত বালক প্রমোদকে খেলিতে দেখিয়া আসিয়াছিলাম, সেই বালকই এখনকার এই পরিণতবয়স্ক যু।—পুরুষ। পাল্যকালের সৌন্দর্য্য তাহার মুর্তিতে এখন পরিস্ফটভাবে প্রকাশ পাইতেছে। সে সৌন্দর্য্যে তখন যাহা কিছুর অভাব ছিল, এখন যৌবনে তাহা পূর্ণতা লাভ করিয়াছে। কিন্তু এখনও প্রমোদের মনোবৃত্তি কিছুমাত্র সংযত হয় নাই, বাল্যকালের দুরন্ত চঞ্চলচেতা প্রমোদ হইতে এখনকার যুবা প্রমোদ স্বভাবে অতি অল্পই পরিবর্তিত। বাল্যকালের মত যদিও আর প্রমোদ কোদাল পাড়ে না, ফুল তুলিলে ভগিনীকে মারে না, কিন্তু তথাপি এখনও প্রমোদ সেই প্রমোদ। সেইরূপ ক্রীড়ার পরিবর্ত্তে এখন সে শাঁকারপ্রিয়, নানাবিধ ব্যায়ামের অনুরাগী এবং কলেজে ঝগড়া করিতে বড় পটু। তাহার দৌরাত্ম্যে কলেজের কোন ছাত্রের দুষ্টামি করিয়া পার পাইবার যো নাই। দুষ্ট ছাত্রের সে যম। এক কথায়, তখনকার সেই উদারচঞ্চল বালক, এখনকার উদারদুরন্ত যুবা। প্রনোদ এখন কালকাতায় থাকিয়া কলেজে পড়েন, ছুটীতে কখনও কথনও এলাহাবাদে বাড়ী আসেন মাত্র। ‘এবার আশ্বিন মাসে পূজার ছুটীতে প্রমোদ বাড়ী না গিয়। একটি বন্ধুর সহিত প্রথমেই কানপুরে বেড়াইতে আসিয়াছেন।

 আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি প্রমোদ বড় শীকারপ্রিয়। কানপুরে আসিয়া গঙ্গার এ পারে শীকারের উপযুক্ত স্থান দেখিয়। শীকারের আশায় বন্ধুর সহিত এই জঙ্গলে আসিয়াছেন। কিন্তু বন্য পশু বধ করা তাঁহাদের অদৃষ্টে খটিল না, বন্দুকের শব্দে কেহই আর বাসস্থান হইতে নির্গত হইল না,