পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়ােবিংশ পরিচ্ছেদ
১১১

স্বর্গীয়। বাস্তবিকই আমি যে দিন থেকে নীরজাকে দেখেছি, সেই দিন থেকে তাকে ভালবাসি। সে ছবি এখন পর্য্যন্তও হৃদয় হতে মুছতে পারি নি। কিন্তু যা বলি বিশ্বাস করো; তাকে আমি যতই ভালবাসি নে কেন, নীরজাকে না পেলে যতই কষ্ট হােক না কেন, তােমাকে বঞ্চিত করে তাকে পেতে আমি কখনই ইচ্ছা করব না—সে লাভে আমি কখনই সুখী হব না।”

 যামিনী বলিলেন, “শােন আমি যা বলি? তুমি বিবাহ না করলেও আমি তাকে বিবাহ করব না! নীরজা আমাকে ভাল বাসে না জেনে আমি কি করে তা করব? বরং তােমার সঙ্গে বিবাহ হলে নীরজা সুখী হবে জেনে আমি সুখী হতে পারব।”

 প্রমােদ যামিনীর কথা বুঝিলেন,—বুঝিলেন যামিনীর মত অবস্থায় পড়িলে তিনিও ঠিক ঐরূপ করিতেন। আপন ইচ্ছানুসারে মন সহজেই বােঝে। যামিনীর কথা তাঁহার যুক্তিপূর্ণ বলিয়া বােধ হইল। তথাপি যামিনীকে সে সংকল্প ত্যাগ করাইবার নিমিত্ত তিনি অনেক বুঝাইলেন, কিন্তু যামিনী অটল ভাবে বলিলেন—“তুমি আমাকে তাহলে এখনও ভাল করে চেনো নি দেখছি। অতটা নীচ আমাকে মনে কোর না ভাই। আমি যেকালে এ বিবাহের প্রস্তাব নিজেই করছি, তুমি নিশ্চয় জেনো যে, এতে আমার একটুও অসুখ হবে না। যদি অসম্মত হও, তা হলেই বরঞ্চ কষ্ট হবে।”

 প্রমােদ নিস্তব্ধে আপন মনেই ভাবিতে লাগিলেন, নানা ভাবনায় তাঁহার মন তরঙ্গিত হইতে লাগিল, তিনি যামিনীর কথার কোন উত্তর করিলেন না। যামিনী মৌনই সম্মতির লক্ষণ ভাবিয়া বলিলেন”আজই আমি তবে কানপুরে যাই, নিজে সন্ন্যাসীর সঙ্গে কথা কয়ে তােমার বিবাহ ঠিক করে আসি,—কি বল?”

 অনেক কথাবার্ত্তার পর যামিনী সেইদিনই কানপুর যাত্রা