পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৩১

 নীরজা এখানে আসিয়া অল্প দিনের মধ্যেই কুলবধূর মত হইয়া পড়িয়াছে, এখন আর সে আগেকার মত অরণ্যবালিকা নাই, এখন নীরজা প্রমােদের কাছে থাকিয়া সহরের অনেক হাবভাব কথাবার্ত্তা শিখিয়া ফেলিয়াছে। সংসারের কাজকর্ম্ম করা, ভদ্রতার অভিধানের চলিত কথাগুলি মুখস্থ করা, সাজসজ্জা করিয়া অন্যের কাছে নিজের সম্মান রক্ষা করা, এ সকলে সে নূতন দীক্ষিত হইতেছিল। দিন কতকের জন্য তাহাব মনে যে বিষণ্ণ ভাব আসিয়াছিল তাহা গিয়া নীরজার হৃদয় এখন হর্ষোচ্ছ্বাসে পূর্ণ। মনের মত লােক পাইয়া এখন আর সে কাকাতুয়াব সহিত কথা কহে না, ফুল লইয়া খেলে না, এখন তাহাব খেলা, আমােদ, গল্প, সকলি মানুষেব সহিত। এখন লীলাময়ী যমুনার উপর, কুলস্থ বটবৃক্ষ পতনের মত নীরজার তরল স্বভাবে গৃহস্থের ভাব আসিয়া পড়িয়াছে; এখন বনের পক্ষী পিঁজরায় আবদ্ধ হইয়া লোজরঞ্জন কথা কহিতে শিখিয়াছে; এখন বনবালা নীরজা আবার সাংসারিক নীরজা হইয়াছে। ক্রমে দিনে দিনে নীরজার সহিত কনকের বন্ধুতা জন্মিতে লাগিল।


ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ

মনের কথা

 অন্তঃপুরে প্রমােদের শয়নকক্ষে বসিয়া, কনক নীরজার চুল বাঁধিয়া দিতেছিল। এ বড় সাধের চুল বাঁধা, প্রমােদের মনে ধরান চাই, কিন্তু প্রমােদের মনে ধরিবে কি না সে তো পরের কথা, কনকের এখন মনে ধরিলে হয়। কতবার যে কনক চুল খুলিয়া বাঁধিল তাহার ঠিক নাই,