তথাপি কনকের মনে ধরিল না, বাঁধাও শেষ হইল না, বেচারী নীরজাও আর সে চুল বাঁধা হইতে ত্রাণ পাইল না। এ বন্ধনের অন্ত নাই দেখিয়া নীরজা বলিল—
“নে ভাই, তোর কি আর হবে না? রাত হয়ে গেল যে!” কনক তাহার হেলিত মস্তক সমান করিয়া লইয়া বলিল—
“তুই, ভাই, সেই অবধি যে নড়ছিস্ তা কি করে হবে? নইলে এতক্ষণ হয়ে যেত। কতবার যে বাঁকা হয়ে গেল তাই খুল্তে হোলো। তুই, ভাই, বনে থেকে থেকে বনের হরিণের মত চঞ্চল হয়ে পোড়েছিস্।”
নী। আহা বনের হরিণ হওয়ায় যে কি সুখ তা ভাই, তুই কি করে জানবি? না, ভাই—বনের এলো হরিণ হওয়ায় চেয়ে পোষা হরিণ হওয়াই ভাল।
ক। তুই সেই জন্যই বুঝি সাধ করে ব্যাধের হাতে ধরা দিলি?
নী। না, ভাই, আমি সাধ করে ধরা দিইনি।
ক। আমার দাদা তো পাখী শীকারে গেছলেন, তা তুই ধরা দিলি কেন?
নী। তা, ভাই সাধ করে কি ধরা দিলেম?
ধরা পড়লেম ফাঁদে,
নইলে কোথা হরিণবালা ব্যাধের লাগি কাঁদে?
ত, যাক, এখন তোর পায়ে পড়ি ভাই, শীঘ্র বেঁধে দে, হাজার বাঁকা হলেও এবার যেন খুলিস নে।
কেন, এর মধ্যেই তোর সাধ ফুরুলো? এই যে বাঁধবার সময় বল্লি, “সে দিনকার বাঁধাটা উনি প্রশংসা করেছিলেন, সেই রকম করে বেঁধে দেও।”
নী। তা, ভাই কি করব? আমার মাথা ব্যথা হয়ে গেছে আর পারিনে, ভাই। তুই এতক্ষণে বাঁধতে পারলি নে আমি কি করব?