কনক সোহাগভরে চুল বাঁধা রাখিয়া একটু অভিমান করিয়া বলিল—
তবে এই রইল, আমি আর বাঁধব না, আমার মনের মত বাঁধতে দিবিনে তবে তোর যেমন করে ইচ্ছা বাঁধ্গে।”
নী। রাগ! আচ্ছা আর বাপু বলব না, তুই যত ইচ্ছা দেরি কর, সেই কাল সকাল বেলা উঠিস্, আমার কি?
ক। অমনি আর কি? তোর ঐ এক কথায় বুঝি আমার রাগ যাবে? আজ তোকে পায়ে ধরে সাধাব তবে হবে। তুই যে বড় কথায় কথায় অভিমান করে দাদাকে সাধাস, আমার বুঝি তাতে রাগ হয় না? আমি আজ তার শোধ তুলব?
নী। আচ্ছা তাই সই, কিন্তু ভাই সাধতে গেলেই গান গাইতে হয়, একটা সাধবার গান তুই আমাকে শিখিয়ে দে, আমি ভাই বুনোমানুষ ওসব গানের তো আমার বিদ্যে নেই। কনক এই কথায় ঠাট্টা ছাড়িয়া বলিল—
“আমার তো অদৃষ্টে কখনো অভিমানের পর আদর ঘটেনি, চিরকাল অভিমান করে মনে মনেই কষ্ট সহ্য করে আসছি। কষ্টের গান ছাড়া তো আর আমি কিছুই শিখিনি যে তোকে শেখাব।”
কনক এই বলিয়া যেন কিছু বিষণ্ণ হইল, পূর্ব্বের আমোদের ভাব ছাড়িয়া আপন মনে গুন গুন করিয়া গাহিতে লাগিল—
“কে আছে রে অভাগিনী, আমার মতন?
জানিনে কখনো কি বা সোহাগ যতন।
জনম দুঃখিনী, হায়! আপনারি ভাবি যায়
ছুঁতে যাই, অমনি সে হয় অদর্শন।