পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২
ছিন্নমুকুল

বিশিষ্ট অথচ অন্তিমকালের ন্যায় অসরল দৃষ্টি দেখিয়া ভৃত্য চমকিয়া উঠিল, আশ্চর্য্য হইয়া মৌনে তাঁহার দিকে চাহিয়া চাহিয়া আর একবার বলিল, “খাবার ঠিক।”

 হিরণকুমার বিরক্তভাবে বলিলেন, “আমার ক্ষিদে নেই, আজ খাব না।” ভৃত্য দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া চলিয়া গেল, আর কথা কহিতে সাহস করিল না। হিরণকুমার তখন উঠিলেন, উঠিয়া টেবিলের সম্মুখে চৌকিতে বসিয়া কয়েকখানি পত্র লিখিতে লাগিলেন— এই সময় একজন ভৃত্য আসিয়া একটী পিস্তল দেখাইয়া বলিল, “জিনিষপত্র সবই প্রায় গোছান হয়ে গেছে, নৌকায় তুল্লেই হয়, এটা বন্দুকের বাক্সে ধরলো না, কাপড়ের বাক্সেই রাখি?”

 হিরণের মনে পড়িল, একদিন একজন চোরের নিকট হইতে পিস্তলটি কাড়িয়া লইয়াছিলেন; এবং ইহা পুলিশে দেখাইয়া চোরের সন্ধান করিবার অভিপ্রায়ে সাবধানে রাখিতে বলিয়াছিলেন। পরে নানারকম কাজের ভিড়ে এতদিন পর্য্যন্ত ও কথাটা মনেই পড়ে নাই। হিরণ পিস্তলটি হস্তে লইলেন, এদিক ওদিক করিয়া দেখিতে লাগিলেন; ভাবিলেন ইহার একটি গুলিতেই তো আজ তাঁহার সমস্ত যন্ত্রণা দূর হইতে পারে। লোভ অসম্বরণীয় দেখিয়া ত্রস্তে তাহা টেবিলে রাখিলেন। কিন্তু মনে হইল তাঁহার ভয় বৃথা, উহাতে গুলি নাই। ভাবিতে ভাবিতে আবার তাহা হস্তে লইলেন, সর্প যেমন তুণ্ডিকের বংশীধ্বনি হইতে ফিরিতে অক্ষম, হিরণকুমার তেমনই সেই পিস্তল হইতে দৃষ্টি উঠাইতে অক্ষম হইলেন। এই সময় একজন অপরিচিত লোকের সহিত একজন চাপরাশি এই গৃহে আসিয়া হিরণকে বলিল,

 “কদিন থেকে এই লোকটি চাকরীর উমেদারীতে আসছে