পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
ছিন্নমুকুল

দেয়ালে ঠেশান দিয়া নাক ডাকাইয়া নিদ্রা দিতেছিল। পায়ের নীচে হইতে তাড়াতাড়ি তোড়ঙ্গটা টানিয়া লওয়ায় সে ত্রন্তে উঠিয়া দাঁড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিল “গাড়ী এসেছে?” তিনি তোড়ঙ্গটা খুলিতে খুলিতে বলিলেন “না, আজ আর কলকাতায় যেতে হবে না, তোমার বাবু এখানে এসেছেন, আমি তাঁর কাছে যাচ্ছি, তুমিও শীঘ্র এস।” বলিয়া পিস্তলটা তোড়ঙ্গ হইতে বাহির করিয়া পকেটে পুরিয়াই তিনি দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন। খোলা তোড়ঙ্গটা বন্ধ করিয়া চাবিটা পকেটে রাখিয়া রামধন স্বগতঃ বলিল “বাবু এসেছে? তা যাচ্ছি, মোদ্দা আমি দূরে দূরে থাকব, বাবুকে আজ দেখা দিচ্ছিনে।”

 যামিনীনাথ তাঁহার দ্রব্য সামগ্রী কুলির জিম্মায় দিয়া, কুলিকে ভৃত্যের জিম্মায় সমর্পণ করিতেছেন এমন সময় হিরণকুমার আসিয়া বলিলেন “আপনার সঙ্গে একটা কথা আছে।” হিরণকে দেখিয়া যামিনীনাথ আশ্চর্য্য হইলেন। একটা কেমন অজ্ঞাত অনির্দ্দিষ্ট অমঙ্গল ভয়ে শঙ্কিত হইয়া বলিলেন “আমার সঙ্গে আপনার কথা! আর এক সময়ের জন্য রেখে দিলে হয় না, এই মাত্র শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে এসে পৌঁছেছি।”

 হিরণকুমার তখন উত্তেজিত, অপ্রকৃতিস্থ; যেন যামিনীকে দোষী সাব্যস্ত করিতে পারিলেই তাঁহার ভাগ্যস্রোত এই মুহূর্ত্তে ফিরিবে। তিনি অধীরভাবে বলিলেন “বিশেষ জরুরী কথা, আপনি এসে পড়লেন নইলে আমিই আপনার কাছে কলকাতায় যাচ্ছিলুম।”

 যামিনী ভৃত্যকে বলিলেন “একটা ভাড়াটে গাড়ী ঠিক করে জিনিসপত্র ওঠা, আমি এখনি আসছি।” ভৃত্য কুলিকে লইয়া চলিয়া গেল। যামিনী হিরণকুমারের সহিত একটু তফাতে বিজন স্থলে আসিয়া বলিলেন “আপনি আমার কাছে কলকাতায় যাচ্ছিলেন, ব্যাপারখানা কি! এত সৌভাগ্য আমার কিসের জন্য বলুন দেখি?

 হিরণকুমার তাঁহার জোব্বার ভিতর হইতে পিস্তলটি বাহির করিয়া