পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
ছিন্নমুকুল

যদিও রাত্রি গভীর হয় নাই, তথাপি ইহার মধ্যেই পথ জনশূন্য বলিলেই হয়, কদাচিৎ দুটি একটি লোক পথে চলিতেছে, রাস্তার ধারে ধারে এখানে ওখানে দুই একটি মুক্ত দোকানে মাত্র মনুষ্যজীবনের ব্যস্ততা এখনো দেখা যাইতেছে, তাহা ছাড়া চারিদিক নিস্তব্ধ। সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর নিষ্কৃতি পাইয়া কোন দোকানী দিব্য আরামে দেওয়াল ঠেস দিয়া তামাক টানিতেছিল, কেহ বা কোন খরিদ্দারের সহিত এখনো দাম চুক্তি করিতেছিল, কেহ বা দৈনিক লাভের তালিকায় দ্বিগুণ লাভ দেখিয়া মনের স্ফূর্ত্তিতে কল্পনার সপ্তম স্বর্গে উঠিতে উঠিতে বাদসাহের কন্যাকেও বিবাহের আশা করিতেছিল। যাহা হউক, প্রায় দোকানদারেরাই সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর, কোন না কোন আমোদে নিযুক্ত। একটি দোকানে পাশাখেলা চলিতেছিল, ভৃত্যটি পাশাথেলার বিশেষ অনুরাগী; সে লোভ সামলাইতে না পারিয়া খেলা দেখিতে পত্র হস্তে সেই দোকানের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল, তখনি রাস্তার আর একদিক হইতে অপর একজন সেখানে আসিয়া বলিল, “আঃ। চাকরী করা কি অধর্ম্মের ভোগ! একে ত সমস্ত দিনেও একটু অবসর নেই, তার উপর একটু ত্রুটি হলেই সর্ব্বনাশ!”

 চাকরীর কথায় ভৃত্যের চিঠির কথা মনে পড়িল, সে খেলা হইতে চোক উঠাইয়া নবাগতের দিকে চাহিয়া বলিল, “ঠিক্ বলেছ, দেখ দশটা বেজে গেছে এখনো আমার ছুটি নেই; এই দেখ আবার চিঠি নিয়ে চলেছি।”

 নবাগত বলিল,—“তুমি চিঠি নিয়ে যাচ্ছ? আমিও এইমাত্র চিঠি দিয়েই আসছি, বলব কি দুঃখের কথা, বাবুর জরুরী চিঠি, না দিলে আমার মাথা থাকতো না, আবার এদিকে প্রমোদ বাবুর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, কত কষ্ট যে দরজা খুলিয়ে চিঠিখানা দিয়ে এসেছি তা ভগবানই জানেন।