পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
ছিন্নমুকুল

না, তাই তিনি এরূপ সঙ্কল্প করিতে পারিলেন, কই কনক তো এমন কথা মনেও আনিতে পারে না! হিরণই যখন তাহাকে ছাড়িয়া যাইতেছেন, কনকের তখন আর বাঁচিয়া কি হইবে? কি আশায় আর সে এই অসীম যন্ত্রণা সহ্য করিবে।”

 সহসা এই সময় বিদ্যুৎ চমকিয়া উঠিল। সেই অল্প অল্প মেঘরাশি গাঢ়তর হইয়া চতুর্দ্দিক অন্ধকার করিয়া ফেলিল, বিকট গর্জ্জনে মেঘ ডাকিয়া উঠিল, দেখিতে দেখিতে মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ও আরম্ভ হইল। কনক সেই নিবিড়-মেঘাচ্ছন্ন অবিশ্রান্ত বৃষ্টিবর্ষণশীল আকাশের দিকে চাহিয়া রহিল। শূন্যময় দৃষ্টিতে চাহিয়া চাহিয়া আপন মনে কাঁদিয়া উঠিল; আবার তখনই অশ্রু-বারি মুছিয়া কি ভাবিতে লাগিল, কি যেন একটা কথা মনে আনিতে চেষ্টা করিল, পারিল না; সেই অন্ধকারময় আকাশ দেখিয়া যেন তাহার কি একটি গান মনে আসিয়াও আসিতেছিল না— তারপর সহসা গাহিয়া উঠিল—

আকাশের ঐ মেঘ এখনি তো ছুটিবে,
আবার জোছনা ভাতি এখনি তো ফুটিবে,
কিন্তু লো স্বজনি আর হৃদয়ের এ আঁধার,
এ জনমে অভাগীর কভু না ঘুচিবে।
জীবন বরষা যদি—বহায় শোণিত নদী
তবু এই আঁখিঁধার আর না মুছিবে।

 আবার সহসা বিকট গর্জ্জনে মেঘ ডাকিয়া উঠিল, কনকের দৃষ্টি ঝলসিয়া দূরে বজ্রাঘাত হইল। বালিকা কখনও উচ্চৈঃস্বরে গান গাহিত না, আজ অজ্ঞানের মত উচ্চৈঃস্বরে আর একটি গান ধরিল, গাহিতে গাহিতে বজ্র ধরিবার আশায় যেন ছুটিয়া বারাণ্ডা হইতে উঠিয়া গেল।

আজ ওরে বজ্র তোরে কখনো না ছাড়িব,
আটকি হৃদয়ে তোরে এ হৃদয় দহিব।