পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
১৮৭

ঊনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ

ঝটিকাবসানে

 এদিকে প্রমোদ ও নীরজা ঝড়ের উপক্রম দেখিয়া তীবে বোট লাগাইতে কহিলেন। কিন্তু বোট না লাগাইতে লাগাইতেই প্রবল বেগে বাতাস বহিতে লাগিল, মাঝিরা অতিশয় যত্ন করিয়াও বোট শীঘ্র তীরে লাগাইতে পারিল না। ঝড়ের অপ্রতিহত প্রভাবে বোট ক্রমাগত উজানে তাঁহাদের বাটীর দিকেই যাইতে লাগিল; মাঝিরা ক্রমে হাল ছাড়িয়া দিবার উদ্যোগ করিল। চতুর্দ্দিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন করিয়া দিয়া প্রবল বেগে বৃষ্টি পড়িতে লাগিল; মাঝে মাঝে এক একবার বিদ্যুতের আলোকে গঙ্গার রুদ্র মূর্ত্তি, ও ছোট ছোট নৌকাগুলির বায়ুতাড়িত অবস্থা বোটস্থিত লোকদিগের মনে দারুণ বিভীষিকা-তরঙ্গ তুলিতে লাগিল। নীরজা প্রমোদের ভয়বিহ্বল বক্ষে মস্তক রাখিয়া অজ্ঞানপ্রায় হইয়া পড়িল। প্রমোদ নিরাশার বলে বলিষ্ঠ হইয়া মাঝিদিগকে উচ্চৈঃস্বরে বোট বাহিতে আজ্ঞা দিতে লাগিলেন।

 এদিকে বোট বায়ুভৱে প্রধাবিত হইয়া কখনও উচ্চে, কখনও নীচে, কখনো যেন পর্ব্বতে, কখনও যেন পাতালে উঠিতে লাগিল। তাঁহাদের বাটী আর বহুদূর নাই, কিন্তু বোটও আর তিষ্ঠায় না। বাতাসের একটি প্রবল ঝল্কায় বোটের মাস্তুল ভাঙ্গিয়া কোথায় উড়িয়া গেল। পরে বোটখানিও তরঙ্গ প্রভাবে তীরে ধাক্কা খাইয়া বিচূর্ণ হইল।

 সুখের বিষয় এই যে, প্রমোদ নীরজাকে বক্ষে লইয়া কুলের নিকট স্বল্প জলে লাফাইয়া পড়িতে পারিয়াছিলেন। অজ্ঞান প্রায় নীরজাকে-বক্ষে ধারণ করিয়া তিনি কিনারায় কিনারায় বাটী অভিমুখে যাইতে লাগিলেন।