পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০০
ছিন্নমুকুল

সকলরূপ ক্ষতি কাল পূরণ করিতে পারে না, সকলরূপ যন্ত্রণা কাল নিবাইতে পারে না। কত মহা সমুদ্র লোপ হইয়াছে কালে তাহার চিহ্ন মাত্রও নাই, কত মহানগরী ধ্বংস হইয়াছে এখন তাহার নাম মাত্র অবশিষ্ট আছে; কত পর্ব্বতশৃঙ্গ চূর্ণ হইয়া গিয়াছে, তাহা আর উঠে নাই, হিরণের ভগ্নহৃদয়ও আর জোড়া লাগিল না; তাঁহার হৃদয়ের আগুন আর নিবিল না!

 একদিন প্রমোদ প্রত্যূষে উদ্যানে বেড়াইতে বেড়াইতে নদী তীরে আসিয়া দেখিলেন, জলের অব্যবহিত উপরে, সোপানে এক ব্যক্তি শয়ান, মাঝে মাঝে সোপানপ্রতিহত জলরাশি উচ্ছ্বলিত হইয়া তাহার অঙ্গে ছড়াইয়া পড়িতেছে, সে ব্যক্তির তাহাতে চেতনা নাই যেন গভীর নিদ্রায় অভিভূত। প্রমোদ নিকটে আসিলেন, শোকবিহ্বলচিত্তে দেখিলেন, সে ব্যক্তি হিরণকুমার — দেখিলেন হিরণকুমার মুমুর্ষু, প্রমোদ নিকটে আসিয়া তাহাকে সোপান হইতে উঠাইতে চেষ্টা করিলেন, তখন হিরণকুমার ধীরে ধীরে একবার চক্ষু উন্মীলিত করিলেন, অশ্রুময় নেত্রে প্রমোদের চক্ষুতে চক্ষু সংলগ্ন করিয়া অন্তিমকালের যাতনাকম্পিত স্বরে বলিলেন, “আমায় উঠিও না—আমি এইখানেই মরব, এইখানেই শুনেছিলাম, কনক আমাকে ভালবাসেন।

 বলিতে বলিতে হিরণ অবসন্ন হইয়া পড়িলেন, তাঁহার প্রাণত্যাগ হইল; প্রমোদ বিষাদাকুলচিত্তে স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন।

 হিরণের এই শেষ কথা গুলি অনেকদিন পর্য্যন্ত তাঁহার মনে লাগিয়া ছিল।

সমাপ্ত