পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
২৩

 নী। ভয় কিসের? ছেলাবেলা থেকে এই বনে আছি—অমাবস্যার রাতেও একলা বেড়াতে আমার ভয় করে না। বাবা অনেক গান গেয়ে গেয়ে ঘুরে সময় কুটীরে শাস্ত্র পাঠ করেন, আমি বনে গান গেয়ে ঘুরে বেড়াই—তিনি ডাকলে তখন ঘরে ফিরি। আমার মনে হয় তমসা মুরলা আমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়াচ্ছেন।”

 প্রমোদ উত্তররামচরিত পড়েন নাই,— তমসা মুরলার উল্লেখ বুঝিলেন না,—বলিলেন—“তমসা মুরলা! তাঁরা কে?”

 বা। তাঁরা বনদেবী, সীতাদেবীর সখী; আমারো সখী।”

 প্র। আপনি ত নিজেই বনদেবী, শকুন্তলা পড়েছেন? আপনাকে দেখলে আমার সেই তাপসীকন্যাকে মনে পড়ে।”

 বা। আমার দুষ্মন্তকে মোটেই ভাল লাগে না, তিনি কি সত্যিই শকুন্তলাকে ঋষির শাপে ভুলে গিয়েছিলেন? আমার তা কিছুতেই বিশ্বাস হয় না।

 প্র। আপনি দেখছি খুব সংস্কৃত জানেন। বাঙ্গ্‌লা পড়েছেন কি?

 বা। পড়ি বইকি? বাবা আমার জন্যে কত বই আনেন। আমার রামায়ণ আছে, মহাভারত আছে, সীতার বনবাস আছে, সাধকসঙ্গীত আছে, আরো কত সঙ্গীত আছে,—আর দুর্গেশনন্দিনী বলে একখানি বই আছে—সেখানা কিন্তু আমার যেমন ভাল লাগে এমন কোন বই না। বাবা আমাকে যখন গীতার মানে বলে দেন—আমার তখন তিলোত্তমার কথা মনে পড়ে। শাস্ত্র পড়তে আমার মোটে ভাল লাগে না। উত্তররামচরিত, শকুন্তলা, রত্নাবলী আগে খুব ভালবাসতুম, এখন দুর্গেশনন্দিনী সব চেয়ে ভালবাসি। আসুন আমার সব গাছগুলি আপনাকে দেখিয়ে আনি। ঐ যে শিরীষ ফুলের গাছ দেখছেন,—ওর তলায় দাঁড়ালে ধ্রুব তারাটি ঠিক চোখের সামনে পড়ে, দেখছেন?