পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

কিন্তু সময়াভাবে প্রমোদ কনকের সকল পত্রের উত্তর দিতে পারিতেন না। আপনার দশখানির উত্তরে কনক দু’একখানি যাহা পাইত, তাহাতেই তাহার আহ্লাদ ধরিত না। প্রমোদ কিন্তু ভগিনীর সেই নিঃস্বার্থ ভালবাসা কিছুই বুঝিতেন না। তবে সর্ব্বপ্রথমে তিনি যখন বাড়ী হইতে কলিকাতায় পড়িতে আসেন তখন, প্রথম বিদেশে আসিয়া স্নেহের অভাব কিছু বুঝিয়াছিলেন। কলিকাতায় প্রথমে আসিয়া প্রমোদ দেখিলেন এখানে আর তাঁহার জন্য কেহ যত্নে বাদাম কুড়াইয়া দেয় না, যত্নে তাঁহার পড়িবার বইগুলি কেহ গুছাইয়া রাখে না, তাঁহার বিষণ্ণ মুখ দেখিলে কেহ কাতরভাবে তাঁহার দিকে চাহিয়া থাকে না, তাঁহার কষ্টে কেহ ভ্রূক্ষেপও করে না। প্রমোদ তখন তাঁহার ভগিনীর স্নেহ বুঝিতে পারিলেন, স্নেহের অভাব কি ভয়ানক — বুঝিতে পারিলেন। আগে কত সময় কনককে মর্ম্মে আঘাত দিয়াছেন, বিষণ্ণ ভ্রাতাকে কনক কাতরভাবে সান্ত্বনা দিতে আসিলে, প্রমোদ বিরক্তভাবে উঠিয়া গিয়া তাহাকে কত মর্ম্মপীড়া দিয়াছেন, আদর করিয়া খাওয়াইতে আসিলে কতবার হাত ছুঁড়িয়া ফেলিয়া তাহাকে কাঁদাইয়াছেন, তাহার ভালবাসার প্রতিদানে বিরক্তি ও তাচ্ছিল্য উপহার দিয়া তাহাকে কত কষ্ট দিয়াছেন, কাছে থাকিতে প্রমোদের তখন এ সকল কিছুই মনে হয় নাই, এখন সহসা অপরিচিতের মধ্যে আসিয়া স্নেহের অভাব বুঝিয়া এই সকল কথা তাঁহার মনে পড়িল। কি করিয়া ভ্রাতার দোষ ভ্রাতার অজ্ঞাতভাবে আপন স্কন্ধে লইয়া সে প্রমোদকে সুশীলার নিকট নির্দোষী প্রতিপন্ন করিত, কত সময় সেই জন্য কনক কত কষ্ট পাইত, প্রমোদের তাহা মনে পড়িল। তাঁহার মনে পড়িল, এক দিন বৃষ্টির পর তাঁহারা ভ্রাতাভগিনীতে বৃষ্টির জলে উদ্যানে খেলা করিতেছিলেন, হঠাৎ বাতায়ন হইতে সুশীলা তাহা দেখিয়া ক্রুদ্ধ হইয়া ডাকিলেন, প্রমোদ তাঁহার নিকট যাইতে যাইতে আবার