পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ
৩৭

সুশীলা স্বভাবতই কিঞ্চিৎ বাহুল্যরূপে কর্ত্তব্যজ্ঞান-সম্পন্ন, আপন আজ্ঞা পালিত না হইলে তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইতেন। অল্প ত্রুটিতেই কিঞ্চিৎ কঠোর হইয়া পড়িতেন। তাঁহার বিশেষ বারণ সত্ত্বেও কনক উহাতে হাত দিয়াছে, তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইলেন; ভাবিলেন, “সেদিন বারণ করিলাম, বিশেষরূপে বারণ করিলাম, আবার সেইকাজ! আমার কথায় অবহেলা! গুরুলোকের আজ্ঞা পালনে অবহেলা! কি করিয়া এ মেয়েকে কর্ত্তব্য শিখাইব?”

 সুশীলা পিতাকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন, শ্রদ্ধাভক্তি করিতেন, তাঁহার দত্ত বইগুলিও সেই হেতু তিনি ভক্তির চক্ষে দেখিতেন। তিনি ভাবিলেন, কনক যদি সুশীলাকে তেমন ভক্তি করিত, তাহা হইলে তাঁহার কথা কখনই অগ্রাহ্য করিতে পারিত না। মেয়েছেলের গুরুজনের প্রতি ভক্তি নাই, কি ভয়ানক কথা! সুশীলা বড় ভাবিত হইয়া পড়িলেন। গম্ভীরম্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন “বইগুলিতে হাত দিতে আমার বারণ তা কি তুমি জান না? কেনই বা বারণ, তাও কি আমি তোমাকে বলি নাই? তবুও তুমি কথা মাননা?”

 কনক চুপ করিয়া রহিল, কি উত্তর দিবে? যদি বলে —আমি ওরূপ করি নাই, তাহা হইলে সুশীলা আবার জিজ্ঞাসা করিবেন, কে তবে করিয়াছে, প্রাণ থাকিতে ভ্রাতার নাম বলিতে পারিবে না। কোন উপায় না দেখিয়া সে চুপ করিয়া রহিল। সুশীলা আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, তখনও কনক নিরুত্তর। একে দোষী, তাহাতে আবার এইরূপ ব্যবহার! তিনি হতাশ হইয়া পড়িলেন। কিন্তু তবু হাল ছাড়া উচিত নহে, তবু তো চেষ্টা করিয়া দেখিতে হইবে, দেখা যাক, যদি শাস্তি দিয়াই তাহার স্বভাব শোধরাইতে পারেন, তিনি শাস্তি স্বরূপ বলিলেন, “প্রমোদের সঙ্গে আজ দেখা করতে পাবে না, সে আজ রাত যাবে, সে সময় তোমার সঙ্গে দেখা হবে না।” সুশীলা জানিতেন, এ শাস্তি তাহার