পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ
৩৯

 বসুমতী বলিল “সে শ্বশুর বাড়ী গেছে, মা।” এই কথায় নীরজা, ভূমি হইতে এক অঞ্জলি বকুল কুড়াইয়া বসুর অঞ্চলে দিয়া বলিল “আহা, সে ব’লেছিল তার স্বামী এলেই আবার সে এই বকুল ফুল নিয়ে যাবে, তুমি এই গুলি তাকে পাঠিয়ে দিও।”

 “বসু বলিল “মা! আমরা দুঃখ করে খাই, কে আবার কাল তার শ্বশুর বাড়ী ঐ ফুল দিতে যায় বল?” কথা কহিতে কহিতে সহসা পেচকের বিকট চীৎকারে তাহারা চমকিয়া উঠিল, নীরজা ত্রস্তে, একবার চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, বসু অমঙ্গলসূচক পেচকশব্দে ভীত হইয়া “দূর দূর”করিয়া উঠিয়া বলিল “গাটা যেন চমকে উঠলো, সন্ন্যাসীমশয় নেই, অমনিতেই কেমন ভয় হয়। ঠাকুরকে ডাক্‌ব নাকি।”

 নী। “হ্যা একটা পেঁচা ডাক্‌ছে তাই ঠাকুরকে ডাকতে হবে! আমিও প্রথমটা চমকে উঠেছিলুম বটে। যাক্, তুমি তোমার মেয়ের গল্প কর। যমুনা তার স্বামীকে খুব ভালবাসে না?”

 আবার এই সময় পূর্ব্বের ন্যায় পেচক ডাকিয়া উঠিল, সেই অমঙ্গল সূচক কর্কশ স্বরে নীরজাও কেমন শিহরিয়া উঠিল, গল্প ছাড়িয়া সেই শব্দ লক্ষ্য করিয়া পশ্চাতে চাহিয়া দেখিল। অস্ফুট চন্দ্রালোকে সে দেখিতে পাইল, চারিজন লোক তাহাদের নিকটেই আসিতেছে, “দেখিতে দেখিতে লোকেরা নিকটে আসিয়া দাঁড়াইল। নীরজা অরণ্যপালিত হইয়াও তাহাদের এই ভীমমূর্ত্তি, সেই কঠোর কটাক্ষ দেখিয়া কেমন ভীত হইয়া পড়িল, বসুও সভয়ে তাড়াতাড়ি উঠিয়া জিজ্ঞাসা করিল “তোমরা কে?” কিন্তু এই সময় চকিতের ন্যায় এক ব্যক্তি নীরজাকে শূন্যে তুলিয়া লইল এবং দুইজন বসুকে গিয়া ধরিল। তাহারা ইহাতে চমকিত হইয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। কিন্তু সে শব্দ মন্দির পর্য্যন্ত পৌঁছিবার পূর্ব্বেই বস্ত্রদ্বারা উভয়ের মুখ বন্ধ হইয়া গেল। নীরজা দস্যুক্রোড়ে হস্ত পদ ছুঁড়িয়া বলপ্রকাশ করিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু সেই