পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ
৪৭

থাকে। এই সব যুক্তিপরম্পরা দ্বারা সন্ন্যাসী প্রমোদকেই দোষী সাব্যস্ত করিয়াছিলেন। এখন আবার প্রমোদকে এতদূর অপ্রকৃতিস্থ হইতে দেখিয়া তিনি নিঃসন্দিগ্ধচিত্তে, উগ্রগম্ভীর দৃঢ়ভাবে বলিলেন “নীরজাকে কোথায় রেখেছ? ভালয় ভালয় আমার হাতে সমর্পণ কর, আমি সমস্ত দোষ ক্ষমা করব, নইলে—”

 প্রমোদ উত্তেজিতস্বরে বলিয়া উঠিলেন “আপনি বিশ্বাস করবেন না কিন্তু নীরজা-হরণ শুনে আপনার কি আমার কার বেশী লেগেছে জানি না।” এই কথা, এই ভণ্ডামী, সন্ন্যাসীর অসহ্য হইল, তিনি বলিলেন, “আর কেন, যথেষ্ট হয়েছে, এখন নীরজা কোথায়?”

 “মহাশয় বাস্তবিক নীরজা কোথায় আমি জানি না। আমি নিরপরাধ। আপনি ত জানেন যে আপনাদের অরণ্যে শেষ যে দিন যাই, তার পরদিনই আমার এলাহাবাদ যাবার কথা ছিল, আমি পরদিনই কানপুর ছাড়ি, আপনার অরণ্যের সংবাদ সেই থেকে আমি কিছুই জানি না।”

 “অরণ্যের সংবাদ না জান্‌তে পার, কিন্তু নীরজা কোথায়?”

 প্রমোদ দেখিলেন, সন্ন্যাসীর সেই অটল সন্দেহ ভঞ্জন করা সহজ নহে। তিনি আপন নির্দ্দোষিতার পক্ষে যতদূর বলিতে পারেন তাহার কিছু ত্রুটি করিলেন না, কিন্তু সন্ন্যাসী সেই অস্বীকার বাক্যে নির্দ্দোষিতার প্রমাণ না পাইয়া বরঞ্চ তাঁহার ঘোর ভণ্ডামীরই প্রমাণ দেখিতে লাগিলেন। কোন উপায় না দেখিয়া প্রমোদ বলিলেন “আমিই যদি নীরজাকে এনে থাকি তাহলে আমার বাড়ীতেই ত রাখব, আপনি বরং আমার বাড়ী খুঁজে দেখুন।”

 “সে খবর আমি না নিয়ে তোমার কাছে আসিনি, তোমার বাড়ীতে তাকে তুমি রাখনি, তা হলে যে শীঘ্র ধরা পড়বে, আর কোথায় লুকিয়ে রেখেছ বল?”