পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছিন্নমুকুল

 খেলা করিতে করিতে সহসা বালকটি বালিকার নিকটে দৌড়িয়া আসিয়া বলিল “কনক, আয়, আয়, দেখবি কেমন ফুল ফুটেছে?” বালিকা আস্তে আস্তে বলিল “কোথায়?” “ঐ দিকে”—এই কথা বলিয়াই বালক কনকের হস্তাকর্ষণ পূর্ব্বক সেই দিকে তাহাকে লইয়া চলিল। বালিকা দুর্ব্বল, ভ্রাতার সঙ্গে সমান দৌড়িতে পারে না, কষ্টে খানিক দূর আসিয়া, পড়িবার উপক্রম করিল, অমনি বালক “তুই চল্‌তে পারিস নে—তুই থাক্‌” বলিয়া মনের বেগে সেই প্রস্ফুটিত ফুলবৃক্ষের নিকট দৌড়িল, তাহার আর বিলম্ব সহে না। বালকটি চঞ্চল অসংযতচিত্ত, যখনি যা মনে আসে তখনি তাহা না করিয়া থাকিতে পারে না। বালক হইতে বালিকাটি আবার সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন, সে যেন দৌড়িতে জানে না, যেন চলিতে জানে না, একস্থানে দাঁড়াইয়া নিস্তব্ধে, অনিমেষলোচনে, সমুদ্রক্রীড়া দেখিতেই সেই সপ্তমবর্ষীয়া বালিকা নিমগ্ন ছিল। দেখিতে দেখিতে তাহার ক্ষুদ্র হৃদয়ে কত কি ভাবের উদয় হইতেছিল কে বলিবে। সহসা একটি পুষ্পবৃক্ষস্থিত প্রজাপতির প্রতি তাহার দৃষ্টি পড়িল। সে অতি ধীরে ধীরে, অতি ভয়ে ভয়ে পদক্ষেপ করিয়া যে গাছে প্রজাপতি বসিয়াছিল সেই গাছের নিকট আসিয়া একদৃষ্টে প্রজাপতির দিকে চাহিয়া রহিল, পরে কি ভাবিয়া কে জানে আস্তে আস্তে তাহার ক্ষুদ্র হাতটি তুলিয়া প্রজাপতির গাত্র স্পর্শ করিতে গেল, অমনি প্রজাপতিটা উড়িয়া আর একটি বৃক্ষে গিয়া বসিল। বালিকার মুখকান্তি যেন বিষণ্নতর হইয়া পড়িল, যেন মনে মনে বলিতে লাগিল “প্রজাপতি, তুমি পলাইলে কেন, আমি আদর করিয়া ছুঁইতে গেলাম, তবে পলাইলে কেন?” বালিকা ক্ষুণ্নমনে সেখান হইতে সরিয়া একটি প্রস্ফুটিত গোলাপ ফুলের নিকট গেল; বিষণ্নভাবে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া ফুলটি দেখিতে লাগিল। দেখিতেও ভয়, কে যেন এখনি আসিয়া তাহার দেখায় বাধা দিবে, কে যেন তাহার সেই ভালবাসার