পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
left
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
৬১

আপনার মার-পিঠ এবং সেই হেতু মকদ্দমা হাঙ্গামার কথা যদি সুশীলাকে না জানাইয়াই চলিয়া যায় তবে আর জানাইবেন কেন? কনক যে কত কষ্ট করিয়া টাকা পাঠায় তাহা প্রমোদ জানিতেন না। টাকা চাহিলেই তিনি পান, তিনি কেবল এই মাত্র জানেন। তাহা যে কনক কোথা হইতে কেমন করিয়া কত কষ্টে জোগায় প্রমোদের তাহা ভাবিবার দরকাব বোধ হইত না। তবে এক একবার কখনও দৈবাৎ যদি এ কথাটি মনে আসিত, যখন মনে হইত বিনা কষ্টে কনকের টাকা পাঠাইবার সম্ভাবনা নাই, তখন প্রমোদ মনে করিতেন ভবিষ্যতে তিনি আর টাকা চাহিবেন না, এবার হইতে মিতব্যয়ী হইবেন। কিন্তু পরেই আবার সে কথা ভুলিয়া যাইতেন। অন্যবারের ন্যায় এবারেও প্রমোদ চাহিবার সময় ভাবিলেন এবার ছাড়া আর কখনও তিনি কনকের নিকট টাকা চাহিবেন না।

 এ দিকে বালিকা কনকের আর দুঃখের সীমা নাই। কি উপায়ে সে এবার ভ্রাতাকে রক্ষা করিবে?

 রাত্রি দ্বিপ্রহর, নিস্তব্ধ অন্ধকারময় পৃথিবী খদ্যোতিকামালায় রঞ্জিত, আর উপরে নীল অনন্ত আকাশ তারকামালায় খচিত। সেই তারাখচিত আকাশের দিকে চাহিয়া বালিকা কনক কাঁদিতেছিল। তাহার দুঃখ সেই জানে, সে দুঃখ কাহারও কাছে বলিবার নহে। কাহারও কাছে মনের দুঃখ প্রকাশ করিতে না পারিয়া বালিকা নির্ব্বাক্ তারাদলের নিকট হৃদয় খুলিয়া কাঁদিতেছিল। কাঁদিতে কাঁদিতে বালিকা উঠিল, আবার গৃহে প্রবেশ করিল, একটী দীপের নিকট আসিয়া হস্তস্থিত একখানি পত্র লইয়া আবার পড়িতে লাগিল—

 “ভাই কনক,

 “অতিশয় বিপদে পড়িয়াছি, তুমি বই আমার আর উপায় নাই।