পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পরিচ্ছেদ

ফুলটি তাহার দেখা বন্ধ করিবার জন্যই তুলিয়া লইবে। বালিকা ফুলের দিকে চাহিয়া চাহিয়া ধীরে ধীরে সেই ফুলটির বৃন্তে আপনার কুসুম-হস্ত রাখিল, ধীরে ধীরে সেই ফুলটি তুলিয়া হস্তে লইয়া সতৃষ্ণ নয়নে দেখিতে লাগিল। ফুল তুলিবার সময় বালক দেখে নাই; হঠাৎ এদিকে দৃষ্টি পড়ায়, ভগিনীর হস্তে ফুল দেখিতে পাইবামাত্র, সক্রোধে ছুটিয়া আসিয়া ক্রোধকম্পিত স্বরে বলিল “আমার গোলাপ ছিঁড়লি যে?” বালিকা ভয়ে জড়সড় হইয়া কাঁদ কাঁদ ভাবে ভ্রাতার দিকে চাহিয়া রহিল, কি যেন বলিতে গেল কিন্তু পারিল না, কথা আটকিয়া গেল। আবার আরক্ত নয়নে তাহার ভ্রাতা বলিল “তুই যে বড় আমার ফুল ছিঁড়লি।” বালিকা তেমনি করুণ দৃষ্টিতে তাহার দিকে চাহিয়া রহিল। যেন নীরবে ছল ছল নেত্রে কত ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছে, কিন্তু কোন কথা ফুটিয়া বাহির হইল না। একবার অতি অস্ফুট মৃদুস্বরে, অতি ধীরে ধীরে বলিল, “আর তুলব না”; সে কথা ক্রুদ্ধ বালকের কর্ণে প্রবেশ করিল না। ভগিনীকে মৌন দৃষ্টে বালক উত্তরোত্তর অধিকতর ক্রুদ্ধ হইয়া, “কেন ফুল ছিঁড়লি” বলিতে বলিতে সরোষে বালিকাকে মারিতে হস্তোত্তোলন করিল, এমন সময় কে একজন অপরিচিত ব্যক্তি আসিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরিল। সেই অপরিচিত ব্যক্তিটি হিরণকুমার। তিনি এতক্ষণ দাঁড়াইয়া তাহাদের খেলা দেখিতেছিলেন। বালকটি বালিকাকে মারিতে উদ্যত দেখিয়া তিনি আর নিরপেক্ষ থাকিতে পারিলেন না। তিনি ছুটিয়া আসিয়া বালকের হাত চাপিয়া ধরিলেন। বালক তাঁহার ব্যবহারে অত্যন্ত আশ্চর্য্য, অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইল; সে কখনো কিছুতে বাধা পায় নাই, যখনি যাহা মনে করিয়াছে তখনি তাহা করিয়াছে, সহসা আজ বাধা পাইয়া নিতান্ত অপমানিত বোধে সরোষে হাত ছাড়াইবার চেষ্টা করিল, কিন্তু চেষ্টা নিষ্ফল হওয়ায় মনে মনে গর্জ্জিতে লাগিল। বালক্ একদিকে সরল ও উদার, অন্যদিকে গর্ব্বিত ও উদ্ধত— কাহারো প্রভুত্ব