পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষোড়শ পরিচ্ছেদ
৭৫

 সেখানে আসিয়া কাকাতুয়াকে বলিল “তুই দুঃখ বুঝিস্? তোকে নিয়ে আজ আমার মনের জ্বালা জুড়াব।” বলিয়া আবার গাহিতে গাহিতে সেই নিভৃত কুঞ্জমধ্যে ফুলপত্রে একটি শয্যা রচনা করিয়া সেই শয্যার চতুষ্পার্শে ফুল সাজাইয়া কাকাতুয়াটিকে তথায় শোয়াইতে গেল। নীরজার হস্ত ছাড়িয়া কাকাতুয়া তখন কুসুম শয্যায় যাইতে চাহিবে কেন? সে অনিচ্ছার স্বরে চীৎকার করিয়া পুনরায় তাহার হস্তে উঠিয়া বসিল। নীরজা আর একবার তাহাকে ফুলশয্যায় শোয়াইতে চেষ্টা করিয়া বলিল—

 “বেশ বিছানা হয়েছে তুই শুয়ে থাক, আমি ততক্ষণ আমার নুরীটিকে এইখানে নিয়ে আসি।” কাকাতুয়া তাহার কথা বুঝিল না, অবাধ্য সন্তানের মত রাগিয়া নীরজার হস্তে চঞ্চুর আঘাত করিল। নীরজাও তাহাতে ঈষৎ ক্রোধ দেখাইয়া কুসুম অঙ্গুলিতে ধীরে ধীরে তাহাকে মারিয়া বলিল—

 “তুই বড় বোকা এইখানে শুয়ে থাক্।” বলিয়া ছেলে ঘুম পাড়াইবার মত দু একটি চাঁপা পত্র দ্বারা বিছানার উপর তাহাকে চাপিয়া ধরিল। কাকাতুয়া বিষম চীৎকার করিতে করিতে আবার তাহার হস্তে উঠিয়া আসিল। তখন নীরজা আর তাহাকে শোয়াইতে চেষ্টা না করিয়া বলিল—

 আহা এ বিছানা বুঝি তোর ভাল লাগলো না? কবে কাকাতুয়া আমি সেই বনে যাব বল দেখি? তাহলে তোকে কত ভাল ভাল পাতার বিছানা ক’রে দেব, সে সব তো এখানে নেই।” কাকাতুয়া তাহার আদর বুঝিয়া তাহার দিকে চাহিয়া ‘কাকাতুয়া’ ‘কাকাতুয়া’ করিল, নীরজা বুঝিল কাকাতুয়া তাহার ব্যথার ব্যথী। এই সময় যামিনীনাথ সমস্ত উদ্যানটি খুঁজিতে খুঁজিতে এই খানে আসিয়া দাঁড়ালেন। দাঁড়াইয়া কাকাতুয়ার সহিত নীরজার গল্প শুনিতে লাগিলেন। নীরজা মুখ তুলিয়া একবার যামিনীনাথকে দেখিল, একটু ছেলেমানুষের মত হাসিল; কিন্তু