পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পরিচ্ছেদ

এখন আস্তে আস্তে কাছে আসিয়া হিরণকে বলিল “দাদার হাত ছেড়ে দাও”—হিরণ হাত ছাড়িয়া দিলেন। বালক তঅখন গম্ভীর ভাবে আরক্ত অথচ অশ্রুময় লোচনে নিস্তব্ধে বাগান হইতে প্রস্থান করিল। অন্য সময় হইলে সে হয় তো মাতার নিকট আসিয়া কত অভিযোগ করিত—কিন্তু আজ তাহা করিল না, একাকী আজ শয়নগৃহে আসিয়া অনেকক্ষণ শুইয়া রহিল। হিরণ বালিকার হাত ধরিয়া গৃহাভিমুখী হইলেন। গৃহে আসিতে আসিতে বালিকা বলিল “কেন তুমি দাদার হাত ধরলে?”

 ইহার অনেকক্ষণ পরে বালক বালিকা দুইটি, রুগ্নকক্ষে মাতার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল। বালকটি অন্য দিনের ন্যায় তত প্রফুল্ল নহে—যেন কিছু ম্রিয়মাণ, তাহা দেখিয়া পীড়িতা মাতা ব্যাকুল ভাবে তাহাকে কাছে ডাকিলেন। কাছে বসিলে চারুশীলা তাঁহার দুর্ব্বল রুগ্নহস্তে ধীরে ধীরে পুত্রের মস্তকে হাত বুলাইয়া দিতে দিতে বলিলেন, “কেন রে প্রমোদ, আজ তোর মুখখানি শুক্‌নো দেখছি কেন।” বালক কথা কহিল না। ততক্ষণ বালিকা কনকলতা ভয়ে ভয়ে গৃহের একটি পার্শ্বে দাঁড়াইয়া রহিল। তাহাকে তাহার মাতা কিছুই বলিলেন না—একবার তার দিকে চাহিয়াও দেখিলেন না। মাতার পক্ষপাতিতা দেখিয়া সুশীলা তাহাকে ডাকিয়া কোলে বসাইয়া চারুশীলাকে বলিলেন “দিদি, এটি বুঝি তোমার ফেল্‌না মেয়ে?” চারুশীলার সেই রুগ্ন ওষ্ঠে দিবাভাগের বিদ্যুতের ন্যায় একটু হাসির রেখা পড়িল। ক্রমে দিন যাইতে লাগিল; কত চিকিৎসক আসিয়া দেখিল, কিছুতেই চারুশীলা আরোগ্য লাভ করিতে পারিলেন না। দুই সপ্তাহ কাল কষ্টে জীবন ধারণ করিয়া ভগিনীর হস্তে সন্তানগুলি সমর্পণ পূর্ব্বক তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন। সুশীলা শোকসন্তপ্ত চিত্তে তাহাদিগকে লইয়া এলাহাবাদে প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন।