পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
ছিন্নমুকুল

 এইস্থলে অনেকে জিজ্ঞাসা করিতে পারেন, নীরজাকে বিবাহ করিতে যামিনী যদি এতই উৎসুক তবে এতদিন তাহাদের বিবাহ না হইবার কারণ কি? কালবিলম্বে ব্যাঘাত ঘটিতে পারে বিবেচনায়, নীরজাকে আপন অধীনে পাইয়াও যামিনী কেন বিবাহ করিলেন না? যামিনীর মতন লোকের বল-পূর্ব্বক বিবাহে কি আপত্তি হইতে পাবে?

 ইহার উত্তর, যামিনীর এ বিবাহে বিলক্ষণ বাধা পড়িয়াছিল। যামিনী যখন প্রথমে বিবাহের অভিপ্রায়ে নীরজাকে বাড়ী আনেন, তখন তিনি ভাবেন নাই যে তাঁহার ইচ্ছার উপর জ্যেঠাইমা কোন কথা কহিবেন। আর প্রথমে যদিই বা ইহাতে আপত্তি প্রকাশ করেন, যামিনী বুঝাইয়া বলিলেও যে তাঁহার সে আপত্তি দূর হইবে না, ইহা তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নাই। কিন্তু বাড়ী আনিয়া বিবাহের অভিপ্রায় প্রকাশ করিবামাত্র জ্যেঠাইমা খড়্গহস্ত হইয়া উঠিলেন। নীরজা অজ্ঞাতকুলশীলা, তাহার সহিত কখনও ভদ্র ঘরের ছেলের বিবাহ হইতে পারে! যামিনী বিশেষরূপ জেদ করাতে অবশেষে ক্রুদ্ধ হইয়া বলিয়া বসিলেন, তাঁহার যে পাঁচ লক্ষ টাকার কোম্পানির কাগজ আছে এ বিবাহ হইলে যামিনীকে কিছুই না দিয়া, যামিনীর ভগিনীকে তাহা দিয়া যাইবেন। এই কথায় যামিনী মুস্কিলে পড়িলেন। একদিকে ধন লোভ, অন্য দিকে নীরজার লোভ,—অবশেষে ধনলোভই জয়ী হইল। অতটা টাকায় মায়া তিনি সহজে ছাড়িতে পারিলেন না। কিন্তু নীরজার আশা যে ইহাতে তিনি একেবারেই ছাড়িলেন, তাহাও নহে—আপাততঃ বৃদ্ধা যত দিন বাঁচিয়া থাকেন ততদিন মাত্র বিবাহ বন্ধ রাখিতে স্থির করিলেন। বৃদ্ধা পীড়িতা বড় জোর আর এক বৎসর বাঁচিতে পারেন—এই অল্প দিনের জন্য অগত্যা নীরজাকে পাইবার লোভ সম্বরণ করিয়া থাকিতে বাধ্য হইলেন।

 আর এক কথা, নীরজাও এখন বিবাহে সম্মত নহে। জোর