পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

感母 ছুটির পড়া কর্ণফুলি নদীর উপরে নৌকার সেতু নির্মাণ করিয়াছেন। একটি মশাল নাই, শব্দ নাই, সেতুর উপর দিয়া অতি সাবধানে সৈন্য পার করিতেছেন । নীচে দিয়া যেমন অন্ধকারে নদীর স্রোত বহিয়া যাইতেছে তেমনি উপর দিয়া মানুষের স্রোত অবিচ্ছিন্ন বহিয়া যাইতেছে। নদীতে ভাটা পড়িয়াছে। পরপারের পর্বতময় দুর্গম পাড় দিয়া সৈন্যেরা অতি কষ্টে উঠিতেছে। রাজধরের প্রতি সৈন্তাধ্যক্ষ ইশা খারা আদেশ ছিল যে, রাজধর রাত্রিযোগে তাহার সৈন্যদের লইয়া নদী বাহিয়া উত্তর দিকে যাত্রা করিবেন— তীরে উঠিয়া বিপক্ষ সৈন্যদের পশ্চাদ্ভাগে লুক্কায়িত থাকিবেন। প্রভাতে যুবরাজ ও ইন্দ্রকুমার সম্মুখ ভাগে আক্রমণ করিবেন— বিপক্ষের যুদ্ধে শ্রাস্ত হইলে পর সংকেত পাইলে রাজধর সহসা পশ্চাৎ হইতে আক্রমণ করিবেন। সেইজন্যই এত নৌকার বন্দোবস্ত হইয়াছে। কিন্তু রাজধর ইশা খার আদেশ কই পালন করিলেন ? তিনি তো সৈন্য লইয়া নদীর পরপারে উত্তীর্ণ হইলেন । তিনি আর-এক কৌশল অবলম্বন করিয়াছেন, কিন্তু কাহাকেও কিছু বলেন নাই । তিনি নিঃশব্দে আরাকানের রাজার শিবিরাভিমুখে যাত্রা করিয়াছেন। চতুর্দিকে পর্বত, মাঝে উপত্যক, রাজার শিবির তাহারই মাঝখানে অবস্থিত । শিবিরে নির্ভয়ে সকলে নিদ্রিত। মাঝে মাঝে অগ্নিশিখা দেখিয়া দূর হইতে শিবিরের স্থান-নির্ণয় হইতেছে। পর্বতের উপর হইতে বড়ো বড়ো বনের ভিতর দিয়া রাজধরের পাচ হাজার সৈন্য অতি সাবধানে উপত্যকার দিকে নামিতে লাগিল— বর্ষাকালে যেমন পর্বতের সর্বাঙ্গ দিয়া গাছের শিকড় ধুইয়া ঘোলা হইয়া জলধারা নামিতে থাকে— তেমনি পাচ সহস্ৰ মানুষ, পাচ সহস্ৰ তলোয়ার, অন্ধকারের ভিতর দিয়া গাছের নীচে দিয়া সহস্ৰ পথে আঁকিয়া বাকিয়া যেন নিম্নাভিমুখে ঝরিয়া পড়িতে লাগিল । কিছু শব্দ নাই, মন্দ গতি । সহসা পাচ সহস্ৰ সৈন্তের ভীষণ চীৎকার উঠিল— ক্ষুদ্র শিবির যেন বিদীর্ণ হইয়। গেল এবং তাহার ভিতর হইতে মানুষগুলা কিলবিল করিয়া বাহির