পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিড়ালের লোভ জালের বাইরে বাতাস শুঁকে শুঁকে বেড়াত।

 এমনি করে অল্প খাওয়া আমার ছেলেবেলা থেকেই দিব্যি সয়ে গিয়েছিল। সেই কম খাওয়াতে আমাকে কাহিল করেছিল এমন কথা বলবার জো নেই। যে ছেলেরা খেতে কসুর করত না তাদের চেয়ে আমার গায়ের জোর বেশি বৈ কম ছিল না। শরীর এত বিশ্রী রকমের ভালো ছিল যে, ইস্কুল পালাবার ঝোঁক যখন হয়রান করে দিত তখনো শরীরে কোনোরকম জুলুমের জোরেও ব্যামো ঘটাতে পারতুম না। জুতো জলে ভিজিয়ে বেড়ালুম সারাদিন, সর্দি হল না। কার্তিক মাসে খোলা ছাদে শুয়েছি— চুল জামা গেছে ভিজে— গলার মধ্যে একটু খুস্-খুসুনি কাশিরও সাড়া পাওয়া যায় নি। আর, পেট কামড়ানি ব’লে ভিতরে ভিতরে বদ-হজমের যে একটা তাগিদ পাওয়া যায় সেটা বুঝতে পাই নি পেটে, কেবল দরকারমতো মুখে জানিয়েছি মায়ের কাছে। শুনে মা মনে মনে হাসতেন, একটুও ভাবনা করতেন ব’লে মনে হয় নি। তবু চাকরকে ডেকে বলে দিতেন, ‘আচ্ছা, যা, মাস্টারকে জানিয়ে দে, আজ আর পড়াতে হবে না।’

 আমাদের সেকেলে মা মনে করতেন ছেলে মাঝে মাঝে পড়া কামাই করলে এতই কী লোকসান। এখনকার মায়ের হাতে পড়লে মাস্টারের কাছে তো ফিরে যেতেই হ’ত, তার উপরে খেতে হত কান-মলা; হয়তো-বা মুচকি হেসে গিলিয়ে দিতেন ক্যাস্টর অয়েল— চিরকালের জন্যে আরাম হ’ত ব্যামোটা। দৈবাৎ কখনো আমার জ্বর হয়েছে— তাকে কেউ জ্বর বলত না, বলত গা-গরম। আসতেন নীলমাধব ডাক্তার। থার্মোমিটার তখন চক্ষেও দেখি নি; ডাক্তার

২০