পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কত গল্প, কত গ্রামের কিংবদন্তী, সেকাল-একালের কত কথা, পল্পীগৃহস্থের কত সুখদুঃখের কাহিনী—সে শুনিয়াছিল এই এক ৰৎসরে। সে চিরদিন গল্প পাগলা, গল্প শুনিতে শুনিতে আহার-নিদ্রা তুলিয়া যায়—যত সামান্য ঘটনাই হোক, তাহার ভাল লাগে। সেদিন সে স্কুলে গিয়া দেখিল স্কুলসুদ্ধ লোক বেজায় সন্ত্রস্ত ! মাস্টারেরা এদিক ওদিক ছুটিাছুটি করিতেছেন। স্কুল-ঘর গাঁদা ফুলের মালা দিয়া সাজানো হইতেছে, তৃতীয় পণ্ডিত মহাশয় খামাকো একটা সুবৃহৎ সিঁড়িভাঙা ভগ্নাংশ কষিয়া নিজের বোর্ড পুরাইয়া রাখিয়াছেন। হঠাৎ আজ স্কুলঘরের বারান্দা ও কম্পাউণ্ড এত সাফ করিয়া রাখা হইয়াছে যে, যাহারা বারোমাস এস্থানের সহিত পরিচিত, তাহাদের বিস্মিত হইবার কথা। হেডমাস্টার ফণীবাবু খাতাপত্ৰ এ্যাডমিশন বুক, শিক্ষকগণের হাজিরা বই লইয়া মহা ব্যস্ত। সেকেণ্ড পণ্ডিতকে ডাকিয়া বলিলেন, ও অমূল্যবাবু, চৌঠে তারিখে খাতায় যে নাম সই করেন নি ? আপনাকে ব’লে ব’লে আর পারা গোল না। দেরিতে এসেছিলেন তো খাতায় সঙ্গ ক’রে ক্লাসে গেলেই হ’ত ? সব মনে থাকে, এইটের বেলাতেই অপু শুনিল একটার সময় ইন্সপেক্টর আসিবেন স্কুল দেখিতে। ইন্সপেক্টর আসিলে কি করিয়া উঠিয়া দাড়াইয়া তাহাকে অভ্যর্থনা করিতে হইবে, তৃতীয় পণ্ডিত মহাশয় ক্লাসের ছেলেদের সে বিষয়ে ভূতালিম দিতে লাগিলেন। বারোটার কিছু পূর্বে একখানা ঘোড়ার গাড়ি আসিয়া স্কুলের সামনে থামিল। হেডমাস্টার তখনও ফাইল দুরস্ত শেষ করিয়া উঠিতে পারেন নাই বোধ হয়—তিনি এত সকালে ইন্সপেক্টর আসিয়া পড়াটা প্ৰত্যাশা করেন নাই, জানাল দিয়া উকি মারিয়া গাড়ি দেখিতে পাইয়াই উঠি-পড়ি অবস্থায় ছুটিলেন। তৃতীয় পণ্ডিত মহাশয় হঠাৎ তড়িৎপৃষ্ট ভেকের মত সজীব হইয়া উঠিয়া তারস্বরে ও মহা উৎসাহে (অন্যদিন এই সময়টাই তিনি ক্লাসে বসিয়া মাধ্যাহিক নিদ্রাটুকু উপভোগ করিয়া থাকেন) দ্রব পদার্থ কাহাকে বলে তাহার বর্ণনা আরম্ভ