পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একসঙ্গে থাকবে, বেশ পড়াশুনো হবে। এখানকার পুকুরের জলে নাইবে না কখনো-জল ভালো নয় স্কুলের ইন্দারায় জলে ছাড়াআচ্ছা যাও, এদিকে আবার ঘণ্টা বাজবার সময় হ’ল । সাড়ে দশটায় ক্লাস বসিল। প্ৰথম বই খাত হাতে ক্লাস-রুমে চুকিবার সময় তাহার বুক আগ্রহের ঔৎসুক্যে টিপ টপ করিতেছিল। বেশ বড় ঘর, নীচু চৌকির উপর মাস্টারের চেয়ার পাতা-খুব বড় ব্ল্যাকবোর্ড। সব ভারী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, নিখুঁতভাবে সাজানে। চেয়ার, বেঞ্চি, টেবিল, ডেস্ক সব ঝকমক করিতেছে, কোথাও একটু ময়লা বা দাগ নাই । মাস্টার ক্লাসে ঢুকিলে সকলে উঠিয়া দাড়াইল । এ নিয়ম পূর্বে সে যে সব স্কুলে পড়িত সেখানে দেখে নাই। কেউ স্কুল পরিদর্শন করিতে আসিলে উঠিয়া দাড়াইবার কথা মাস্টার শিখাইয়া দিতেন । সত্য সত্যই এতদিন পরে সে বড় স্কুলে পড়িতেছে বটে।• • • জানাল দিয়া চাহিয়া দেখিল পাশের ক্লাস-রুমে একজন কোটপ্যাণ্টপরা মাস্টার বোডে কি লিখিতে দিয়া ক্লাসের এদিক-ওদিক পায়চারী করিতেছেন-চোখে চশমা, আধাপাকা দাড়ি বুকের উপর পড়িয়াছে, গম্ভীর চেহারা । সে পাশের ছেলেকে চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিল উনি কোন মাস্টার ভাই ? ছেলেটি বলিল-উনি মিঃ দত্ত, হেডমাস্টার-ক্ৰিশ্চান, খুব ভাল ইংরিজি জানেন । অপূৰ্ব শুনিয়া নিরাশ হইল যে তাঁহাদের ক্লাসে মিঃ দত্তের কোন ঘণ্টা নাই ! থাডক্লাসের নিচে কোন ক্লাসে নাকি নামেন না। পাশেই স্কুলের লাইব্রেরী, ন্যাপথলিনের গন্ধ-ভরা পুরোনো বই-এর গন্ধ আসিতেছিল। ভাবিল এ ধরণের ভরপুর লাইব্রেরীর গন্ধ কি কখনো ছোটোখাটো স্কুলে পাওয়া যায় ? ঢং ঢেং করিয়া ক্লাস শেষ হওয়ার ঘণ্টা পড়ে-আড়বোয়ালের স্কুলের মত একখণ্ড রেলের পাটির লোহা বাজায় না, সত্যিকারের পটা-কি গম্ভীর আওয়াজটা! S8