পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপু দেখিল-সে যে টাকা পাঠায় নাই, মা একটিবারও সে কথা উত্থাপন করিল না, শুধুই তাহার কলিকাতায় অবস্থানের সুবিধাঅসুবিধা সংক্রান্ত নানা আগ্ৰহ-ভরা প্ৰশ্ন। নিজেকে এমনভাবে সর্বপ্রকারে মুছিয়া বিলোপ করিতে তাহার মায়ের মত সে আর কাহাকেও এ পর্যন্ত দেখে নাই। সে জানিত বাড়ি গেলে এ লইয়া মা কোন কথা তুলিবে না। সর্বজয়া একটা এনামেলের বাটি ও গ্লাস ঘরের ভিতরে হইতে আনিয়া হাসিমুখে বলিল,—এই দ্যাখ, এই দু’খানা ছেড়া কাপড় বদলে তোর জন্য নিইচি-বেশ ভালো, না । কত বড় বাটিটা ଗ୍ଯାସ୍ । অপু ভাবিল, মা যা দ্যাখে তাই বলে ভালো, এ আর কি ভালো, যদি আমার সেই পুরানো দোকানে কেনা প্লেটগুলো মা দেখাত ? কলিকাতায় সে দুরূহ জীবন-সংগ্রামের পর এখানে বেশ আনন্দে ও নির্ভাবনায় দিন কাটে । রাত্রে মায়ের কাছে শুইয়া সে আবার নিজেকে ছেলেমানুষের মত মনে করে-বলে, সেই গানটা কি মা, ছেলেবেলায় তুমি আর আমি শুয়ে শুয়ে রাত্রে গাইতাম-এক একদিন দিদিও-সেই চিরদিন কখনও সমান না যায়—কভু বনে বনে রাখালের সনে, কভু বা রাজত্ব পায়। পরে আবদারের সুরে বলে-গাও না মা, গানটা ? সৰ্বজয়া হাসিয়া বলে-হঁ্যা, এখনকি আর গলা আছে-দূর-এসে দু’জনে গাই-এসে না মা-খুব হবে, এসোসৰ্বজয়ার মনে আছে--অপু যখন ছোট ছিল তখন কোনও কোনও মেয়ে-মজলিসে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গান হয়ত হইত, অপুর গলা ছিল খুব মিষ্টি কিন্তু তাহাকে প্ৰথমে কিছুতেই গান-গাওয়ানো যাইত ন-অথচ যেদিন তাহার গাহিবার ইচ্ছা হইত, সেদিন মায়ের কাছে চুপি চুপি বার বার বলিত, আমি কিন্তু আজ গান গাইবো না, গাইতে বলে না। অর্থাৎ সেদিন তাকে এক আধবার বলিলেই সে গাহিবে । সর্বজয়া ছেলের মন বুঝিয়া অমনি বলিত-তা পু