পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এবার কেন একটা গান কর না ?--দু’ একবার লাজুক-মুখে অস্বীকার করার পর অমনি অপু গান শুরু করিয়া দিত। সেই অপু এখন একজন মানুষের মত মানুষ । এত রূপ এ অঞ্চলের মধ্যে কে কবে দেখিয়াছে ? একহার চেহারা বটে, কিন্তু সবল, দীর্ঘ, শক্ত হাত-পা । কি মাথার চুল, কি ডাগর চোখের নিষ্পাপ পবিত্র দৃষ্টি ; রাঙা ঠোঁটের দু’পাশে বাল্যের সে সুকুমার ভঙ্গী এখনও বিলুপ্ত হয় নাই, শুধু সৰ্বজয়াই তাহ ধরিতে পারে। অপু কিন্তু সে ছেলেবেলার অপু আর নাই। প্ৰায় সবই বদলাইয়া গিয়াছে, সে অপূর্ব হাসি, সে ছেলেমানুষী, সে কথায় কথায় মান অভিমান, আবদার, গলায় সে রিণরিণে মিষ্টি সুর—এখনও অপুর স্বর খুবই মিষ্টি-তবুও সে অপরূপ বাল্যস্বর, সে চাঞ্চল্যপাগলামি-সে সবের কিছুই নাই। সব ছেলেই বাল্যে সমান ছেলেমানুষ থাকে না। কিন্তু অপু ছিল মূর্তিমান শৈশব। সরলতায়, দুষ্টামিতে, রূপে, ভাবুকতায়-দেবশিশুর মত ! এক ছেলে ছিল তাই কি, শত ছেলেতে কি হয় ? সর্বজয়া মনে মনে বলে-বেশী চাই নে, দশটা পাঁচটা চাইনে ঠাকুর, ওকেই আর জন্মে আবার কোলজোড়া ক’রে দিও। সৰ্বজয়ার জীবনের পাত্র পরিপূর্ণ করিয়া অপু যে অমৃত শৈশবে পরিবেশন করিয়াছে, তারই স্মৃতি তার দুঃখ-ভরা জীবনপথের পাথেয় । আর কিছুই সে চায় না । কোনও কোনও দিন রাত্রে অপু মায়ের কাছে গল্প শুনিতে চায়। সর্বজয়ী বলে—তুই তো কত ইংরেজী বই পড়িস, কত কি-তুই একটা গল্প বল না। বরং শুনি। অপু গল্প করে। দু’জনে, নানা পরামর্শ করে, সর্বজয়া পুত্রের বিবাহ দিবার ইচ্ছা প্ৰকাশ করে। কঁাটাদিহের সাণ্ডাল বাড়ি নাকি ভালো মেয়ে আছে সে শুনিয়াছে, অপু পাশটা দিলেই এইবার তারপর অপু বলিল,-ভালো কথা মা-আজকাল জ্যোঠমারা কলকাতায় বাড়ি পেয়েছে যে ! সেদিন তাদের বাড়ি গেছলাম Ο Σ