পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মধ্যেই আবার এক দুর্ঘটনা ঘটিল । সন্তান হইবার জন্য বাপের বাড়ি গিয়া অপর্ণা মারা গেল। তাহার শিশু পুত্রটি মামাবাড়িতে মানুষ হইতে লাগিল। অপুও অপর্ণার শোকে কেমন যেন হইয়া গেল। দু’একবার নিজের পুত্র কাজলকে দেখিতে গিয়াছিল বটে, কিন্তু লইয়া আসে নাই । কাজল দাদামশায়ের কাছেই রহিল । অপু ছয়-সাত বৎসর সমস্ত ভারতে ঘুরিল, মধ্যপ্রদেশের অরণ্যে কাজ করিল। এরই ফঁাকে ফঁাকে যে নিজের অপূর্ব মায়াময় শৈশব ও তাঞ্ছার জীবন লইয়া একটি উপন্যাস লিখি না। উপন্যাসটি ছাপাইবার ব্যবস্থা করা দরকার, ছেলেকে ও খুব দেখিতে ইচ্ছা করে। ছেলেকে এবার সে নিজের কাছে আনিয়া রাখিবে । অপু কলিকাতায় ফিরিল। ভাদ্রমাসের শেষের দিক । দাদামশায়ের বৈকালিক মিছরির পান খাওয়ার শ্বেত পাথরের গেলাসটা তাহার বড় মামীম মাজিয়া ধুইয়া উপরের ঘরের বাসনের জলচৌকিতে রাখিতে তাহার হাতে দিল । সিড়িতে উঠিবার সময় কেমন করিয়া গেলাস হাত হইতে পড়িয়া চুরমার হইয়া ভাঙ্গিয়া গেল । কাজলের মুখ ভয়ে বিবৰ্ণ হইয়া গেল, তাহার ক্ষুদ্র হৃৎপিণ্ডের গতি যেন মিনিটখানেকের জন্য বন্ধ হইয়া গেল, যাঃ, সৰ্বনাশ ! দাদামশায়ের মিছরিপানার গেলাসটা যে ! সে দিশেহারা অবস্থায় টুকরাগুলো তাড়াতাড়ি খুটিয়া খুটিয়া তুলিল ; পরে অন্য জায়গায় ফেলিলে পাছে কেহ টের পায়, তাই তাড়াতাড়ি আরব্য উপন্যাস যাহার মধ্যে আছে সেই বড় কাঠের সিন্দুকটার পিছনে গোপনে রাখিয়া দিল। এখন সে কি করে । কাল যখন গোলাসের খোজ পড়িবে বিকালবেলা, তখন সে কি জবাব দিবে ? কাহারও কাছে কোন কথা বলিল না, বাকি দিনটুকু ভাবিয়া কিছু ঠিক করিতেও পারিল না । এক জায়গায় বসিতে পারে না, উদ্বিগ্ন মুখে ছট্‌ফট্‌ করিয়া বেড়ায় ঐ-রকম একটা গেলাস আর কোথাও পাওয়া যায় না ? একবার সে এক খেলুড়ে বন্ধুকে চুপি চুপি বলিল, --ভাই তো-তোদের বাড়ি একটা পাথরের গে-গেলাস আছে ? VeG অপরাজিত-৫