পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাজলের কোনো অসুবিধা নাই-সে রাস্তার ধারের জানালাটায় দাড়াইয়া পথের লোকজন দেখিতেছে-না হয়, বাবার বইগুলো নাড়িয়া চাড়িয়া ছবি দেখিতেছে-মোটের উপর বেশ আনন্দেই আছে। এই বিরাট নগরীর জীবনস্রোত কাজলের কাছে অজানা দুৰ্বোধ্য। কিন্তু তাতার নবীন মন ও নবীন চক্ষু যে-সকল জিনিস দেখে ও দেখিয়া আনন্দ পায়-বয়স্ক লোকের ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাহা অতি তুচ্ছ। হয়তো আঙুল দিয়া দেখাইয়া বলে —দ্যাখে। বাবা, ওই চিলটা একটা কিসের ডাল মুখে ক’রে নিয়ে যাচ্চিলে, সামনের ছাদেৰ আলসেতে লেগে ডালটা-ওই দ্যাখে ধাবা রাস্তায় পড়ে গিয়েছে?-- বাবার সঙ্গে বেড়াইতে বাহিৰ হইয়া এত ট্রাম, মোটর, লোকজনের ভিড়ের মাঝখানে কোথায় একটা কাক ফুটপাতের ধারে ড়েনের জলে স্নান করিতেছে তাই দেখিয়া তহিপ্নে মহা আনন্দ--- তাহা আবার বাবাকে না দেখাইলে কাজলের মনে তৃপ্তি হইবে না। সব বিষয়েই বাবাকে আনন্দের ভাগ না দিতে পারিলে, কাজলের যেন আনন্দ পূর্ণ হয় না। খাইতে খাইতে বেগুনিটা, কি তেলে-ভাজা কচুরিখানা এক কামড় খাইয়া ভাল লাগিলে বাকী অ!ধখানা বাবার মুখে গুজিয়া দিবে।--ভাপুও তাহা তখনি খাইয়া ফেলে-ছিঃ আমার মুখে দিতে নেই--একথা বলতে তার প্রাণ কেমন করে-কাজেই পিতৃত্বের গাম্ভীৰ্যভরা ব্যবধান অকারণে গড়িয়া উঠিয়া পিতা-পুত্রের সহজ সরল মৈত্রীকে বাধাদান করে নাই, কাজল জীবনে বাবার মত সহচর পায় নাই—এবং অপুও বােধ হয় কাজলের মত বিশ্বস্ত ও একান্ত নির্ভরশীল তরুণ বন্ধু খুব বেশী পায় নাই জীবনে । আর কি সরলতা ? --পথে হয়ত দু’জনে বেড়াইতে বাহির হইয়াছে, কাজল বলিল-শোনো বাবা একটা কথা-শোনো, চুপি চুপি বলব-পরে পথের এদিক ওদিক চাহিয়া লাজুক মুখে কানে কানে বলে-ঠাকুর বড় দুটােখানি ভাত দ্যায় হোটেলে—আমার খেয়ে পেট ভরে না—তুমি বলবে বাবা ? বললে আর দুটো দেবে না ? ܘܘ