পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডাক্তারখানায় বসিয়া কড়ি-বড়গা গুণিতেছিলেন, তিনি তাহদের সঙ্গে বাসায় আসিলেন, আপুকে ডাকিয় তাহার হাত ও বুক দেখিলেন, কাজলকে ঔষধ লইবার জন্য ডাক্তারখানায় আসিতে বলিলেন। অপু তখন একটু ভাল-সে ব্যস্তসমস্ত হইয়া ক্ষীণাসুরে বলিল ও পারবে না, রাত্তিরে এখন থাক, ছেলেমানুষ, এখন থাক— এই সবের জন্য বাবার উপরে রাগ হয় কাজলের । কোথায় সে ছেলেমানুষ, সে বড় হইয়াছে। কোথায় সে না। যাইতে পারে, বাবা পাঠাইয়া দেখুক দিকি সে কেমন পারে না ? বিশেষত: অপরের সামনে তাহাকে কচি বলিলে, ছেলেমানুষ বলিলে, আদব করিলে বাবার উপর তাহার ভারী রাগ হয়। বাবার সামনে সেন্টাভি ধরাইতে গেলে কাজল জানে বাবা বারণ করিবে, বলিবে-উহু করিস নে খোকা, হাত পুড়িয়ে ফেলবি । সে সরু বারান্দাটার এক কোণে স্টোভটা লইয়া গিয়া কয়েকবাব চেষ্টা করিয়াও সেটা জ্বালিতে পারিল না । অপু একবার বলিল কি কচ্ছিস ও খোকা, কোথায় গেলি ও খোকা ? আঃ, বাবার জালায় অস্থির! ঘরে আসিয়া বালল বাবা কি খাবে ? মিছরি আর বিস্কুট কিনে আনবো ? অপু বলিল—না না, সে তুই পারবি নে । আমি খাবো না কিছু। লক্ষ্মী বাবা, কোথাও যে ও না ঘর ছেড়ে, রাত্তিরে কি কোথাও যায় ? হারিয়ে যাবি। -- হঁ্যা, সে হারাইয়া যাইবে । ছাড়িয়া দিলে সে সব জায়গায় যাইতে পারে, পৃথিবীর সর্বত্র এক যাইতে পারে, বাবার কথা শুনিলে তাহার হাসি পায় । মাসদেড় হইল অপু সারিয়া উঠিয়াছে। হাসপাতালে যাইতে হয় নাই, এই গলিরই মধ্যে বঁড়িয্যেরা বেশ সঙ্গতিপন্ন গৃহস্থ, তঁহাদের এক ছেলে ভাল ডাক্তার। তিনি অপুর বাড়িওয়ালার মুখে সব শুনিয়া নিজে দেখিতে আসিলেন, ইনজেকশনের ব্যবস্থা করিলেন, শুশ্ৰষ্যার লোক দিলেন, কাজলকে নিজের বাড়ি হইতে খাওয়াইয়া আনিলেন। উহাদের বাড়ির সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ আলাপ হইয়া গিয়াছে। ክም ©