পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিত, তাম্রবর্ণ মরুদিগন্তের স্বপ্নমায় তাহার চোখের অঞ্জন মাখাইয়া দিত ; কিন্তু বিশ্বসাহিত্যের দুর্ভাগ্য, তাহারা নীরবে অত্যাচার সহ্যু করিয়া বিশ্ব হইতে বিদায় লইল । রাত্ৰিতে অপুর মনে হইল সে একটা বড় অন্যায় করিতেছে, কাজলের প্রতি একটা গুরুতর অবিচার করিতেছে । ওরাও তো সেই শৈশব। কাজলের এই অমূল্য শৈশবের দিনগুলিতে সে তাহাকে এই ইট, কংক্রিট, সিমেন্ট ও বার্ডকোম্পানীর পেটেণ্ট স্টোনে বাধানো কারাগারে আবদ্ধ রাখিয়া তাহার কঁাচা, উৎসুক, স্বপ্নপ্রবণ শিশুমন তুচ্ছ বৈচিত্র্যহীন অনুভূতিতে ভরাইয়া তুলিতেছে-তােহাঁর জীবনে বন-বনানী নাই, নদীর মর্মর নাই, পাখির কলস্বর, মাঠ, জ্যোৎস্না, সঙ্গী-সার্থীদের সুখদুঃখ—এসব কিছুই নাই, অথচ কাজল আতি সুন্দর ভাবপ্রবণ বালক-তাহার পরিচয় সে অনেক বার পাইয়াছে। কাজল দুঃখ জানুক, জানিয়া মানুষ হউক। দুঃখ তার শৈশবে গল্পে পড়া সেই সোনা-করা জাদুকর ! ছেড়া-খোড়া কাপড় ঝুলি ঘাড়ে বেড়ায়, এই চাপ-দাড়ি, কোণে-কঁাদাড়ে ফেরে, কারুর সঙ্গে কথা কয় না, কেউ পোছে না, সকলে পাগল বলে দূর দূর করে, রাতদিন হাপর জ্বালায়, রাতদিন হাপর জালায় । পেতল থেকে, রাং থেকে, সৰীসে থেকে ও-লোক কিন্তু সোনা করতে জানে, করিয়াও থাকে। এই দিনটিতে বসিয়া ভাবিতে ভাবিতে সর্বপ্রথম এতকাল পরে একটা চিন্তা মনে উদয় হইল। নিশ্চিন্দিপুর একবারটি ফিরিলে কেমন হয় ? সেখানে আর কেউ না থাক, শৈশব-সঙ্গিনী রাণু।দিদি তো আছে । সে যদি বিদেশে চলিয়া যায়, তার আগে খোকাকে তার পিতামহের ভিটাটা দেখাইয়া আনাও তো একটা কৰ্ত্তব্য ? পরদিনই সে কাশীতে লীলাদিকে পাঁচিশটা টাকা পাঠাইয়া লিখিল, সে খোকাকে লইয়া নিশ্চিন্দিপুর যাইতেছে, খোকাকে পিতামহের গ্রামটা দেখাইয়া আনিবে। পত্রপাঠ যেন লীলাদি তার দেওরকে সঙ্গে লইয়া সোজা নিশ্চিন্দিপুরে চলিয়া যায়। b”ግ