পাতা:ছোট কাকী ও অন্যান্য গল্প - জলধর সেন.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মধ্যে দেশত্যাগ করিলাম। রামচরণকে সুরবালার কাছে গিয়া থাকিবার জন্য আদেশ করিয়াছিলাম, কিন্তু সে আমার হুকুম তামিল করে নাই ; সজলচক্ষে বলিয়াছিল, “খোকাবাবু! আমিই তোমাকে কোলে-পীঠে করিয়া মানুষ করিয়াছি ; এমন কি অপরাধ করিয়াছি যে, এত কঠিন দণ্ড দিতে চাও ? বিদেশে তোমাকে দেখিবে শুনিবে কে ?’-এ বুড়োকে ছাড়িয়া যাইও না।” তাই রামচরণ সেইদিন হইতে ছায়ার মত আমার সঙ্গে সঙ্গে ফিরিতেছে। আজ আমি স্বদেশ হইতে বহুদূরে। পৰ্ব্বতের নিভৃত বক্ষের একটি ক্ষুদ্র বাঙ্গালায় আশ্ৰয় গ্ৰহণ করিয়াছি। আমার জীবনের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হইবার আর কত বিলম্ব, তাহা জানি না ; কিন্তু আর কতকাল এমন লক্ষ্যহীনভাবে, শ্ৰান্ত জীবনভার বহিয়া পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইব ?—রমণীর সেই অন্তিম কথা দিবানিশি আমার কাণে আসিয়া বাজিতেছে । আজ এই দিবা-অবসানে দুৰ্গম গিরিপ্রান্তে আমার এই ক্ষুদ্র, রুদ্ধদ্বার শয়নকক্ষে জগতের পরপ্রান্তবাসিনী, আমার জীবন-মরণের সাধনার ধন, আমার ইহলোকের আলোক ও পরলোকের অবলম্বন, আমার উভয় লোকের সর্বস্ব-প্ৰেমময়ী ধৈৰ্য্যময়ী মহিমময়ী রমণীর সেই আশ্বাসবাণী ঐ আৰ্দ্ধ বায়ুহিল্লোলে ও বৃষ্টির স্বরূঝর শব্দে ভাসিয়া আসিয়া আমার কর্ণে প্রবেশ করিতেছে ; আমার দেহ কণ্টকিত ও চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হইয়া উঠিতেছে। আমার মনের ভাব মুখে প্ৰকাশিত না হউক, আমার অন্তরের ভাব অন্তরে অনুভব করিয়াই বৃদ্ধ রামচরণ আমার মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে