পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১২৯

বাড়ির দিকে কখনো যাও টাও বাবা? হারাণ ডাক্তার ভাড়াটে এনে দিলেন, তার নামটাও জানিনে।

 শঙ্কর বলে, ভাড়াটে কই কেউ আসেনি তো? সদর দরজায় তালা বন্ধ।

 শ্যামা হাসিল। তুমি জান না শঙ্কর, এক মাসের ওপোর ভাড়াটে এসেছে, পঁচিশ টাকা ভাড়া দিয়েছে। ওদিকে তুমি যাওনি কখনো।

 শঙ্কর বলে, না মাসীমা, আপনাদের বাড়ি খালি পড়ে আছে। কেউ নেই বাড়িতে। জানালা কপাট বন্ধ। সামনে বাড়িভাড়ার নোটিশ ঝুলছে—আমি কদ্দিন দেখেছি।

 শ্যামা অবাক হইয়া বলে তবে কি ভাড়াটে উঠে গেল?

 আপনি যাদের ভাড়া দিয়েছিলেন তারা যাবার পর কেউ আসেনি মাসীমা। আমি যাই যে মাঝে মাঝে নকুড় বাবুর বাড়ি, আমি জানিনে?—শঙ্কর হাসে। ভাড়াটে এলে কি বাইরে তালা দিয়ে লুকিয়ে থাকত?

 হারাণ তবে ছুতা করিয়া তাহাকে অর্থ সাহায্য করিতেছে। হারাণের কাছে কোনদিন টাকা সে চাহে নাই, কেবল ভাড়াটে উঠিয়া যাওয়া উপলক্ষে হারাণকে সেই যে সে চিঠি লিখিযাছিল সেই চিঠিতে দুঃখের কাঁদুনি গাহিয়াছিল অনেক। তাই পড়িয়া হারাণ তাহাকে পঁচিশ টাকা পাঠাইয়া দিয়াছে। যতদিন বাড়িতে তাহার ভাড়াটে না আসে মাসে মাসে নিজেই তাহাকে এই টাকাটা দেওয়া ঠিক করিয়াছে হারাণ। সংসারে আত্মীয় পর সত্যই চেনা যায় না। শ্যামা কে হারাণের? শ্যামার মত দুঃখিনীর সংশ্রবে হারাণকে সর্বদা আসিতে হয়, শ্যামার জন্য এত তার মমতা হইল কেন?

 তিন দিন পরে শঙ্কর কলিকাতা চলিয়া গেল। এই তিন দিন সে ভাল করিয়া হাঁটিতে পারে নাই, ঘরের মধ্যে সে বন্দী হইয়া থাকিয়াছে। মজা হইয়াছে বকুলের। বাড়ির ছেলেরা বাহিরে চলিয়া গেলে একা সে শঙ্করকে দখল করিতে পারিয়াছে। শঙ্কর চলিয়া গেলে কদিন বকুল মনমরা হইয়া রহিল।

 তিন চার দিন পরে হারাণের মণিঅর্ডার আসিল। সই করিয়া টাকা নেওয়ার সময় শ্যামার মনে হইল গভীর ও গোপন একটি মমতা দূর হইতে