পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
জননী

চুরি শ্যামা করে, গোপনে চুরি করা খাবার বিধানকে খাওয়ায়। খানিকটা গাওয়া ঘি যোগাড় করিয়া সে বড় মুস্কিলে পড়িয়াছিল। রাখালের ছেলেমেয়ে ছাড়া আর সকলকে একসঙ্গে বসিয়া খাইতে হয়, আগে অথবা পরে। একা খাইলেও রান্নাঘরে খাইতে হয় ভাত, দাওয়ায় খাইতে হয় জলখাবার, সকলের চোখের সামনে। কেমন করিয়া ঘিটুকু ছেলেকে খাওয়াইবে শ্যামা ভাবিয়া পায় নাই। বলিয়াছিল, এমনি একটু একটু খেয়ে ফ্যাল না খোকা পেটে গেলেই পুষ্টি হবে।

 তাই কি মানুষ পারে, কাঁচা ঘি শুধু খাইতে?

 শেষে মুড়ির সঙ্গে মাখিয়া দিয়া একটু একটু করিয়া শ্যামা ঘিটুকুর সদ্‌গতি করিয়াছিল।

 খোকার তখন বাৎসরিক পরীক্ষা চলিতেছে, একদিন সকালে শ্যামাকে ডাকিয়া রাখাল বলিল, জান বৌঠান, শীতলবাবু তো খালাস পেয়েছেন আট দশ দিন হল। নকুড়বাবু পত্র লিখেছেন। তোমাদের কলকাতার বাড়িতে এসেই নাকি আছে, দিনরাত ঘরে বসে থাকে, কোথাও যায়-টায় না।

 পত্রখানা দেখি ঠাকুর-জামাই?

 নকুড়বাবু লিখিয়াছেন শীতলের চেহারা কেমন পাগলের মত হইয়া গিয়াছে, বোধ হয় সে কোন অসুখে ভুগিতেছে, এতদিন হইয়া গেল, কেহ তাহার খোঁজ খবর লইতে আসিল না দেখিয়া জ্ঞাতার্থে এই পত্র লিখিলেন।

 রাখাল বলিল, তোমাদের বাড়িতে না ভাড়াটে আছে বৌঠান? শীতল বাবু ওখানে আছেন কি করে?

 কি জানি ঠাকুরজামাই কিছু বুঝতে পারছি না। আপনি একবার যান না কলকাতা?

 কথাটা এখানে প্রকাশ করিতে শ্যামা রাখালকে বারণ করিয়া দিল। বিধান পরীক্ষা দিতেছে, এখন এ সংবাদ পাইলে হয় ত সে উত্তেজিত হইষা উঠিবে, ভাল লিখিতে পারিবে না।—বছরকার পরীক্ষা সহজ তো নয় ঠাকুরজামাই, এখন কি ওকে ব্যস্ত করা উচিত?

 পাগলের মত চেহারা হইয়া গিয়াছে? অসুখে ভুগিতেছে? বিধানের পরীক্ষা না থাকিলে শ্যামা নিজে দেখিতে যাইত। কিন্তু এখানে শীতল