শ্যামার মন কি ভার হইয়া ছিল? ছিল বৈকি! শ্যামার ভাবনা কি শুধু বকুলের জন্য। এমনি শরৎকালে যাকে শ্যামা কোলে পাইয়াছিল, সোনার টুকরার সঙ্গে লোকে যাকে তুলনা করে, তাকে না দেখিলে শ্যামার ভাল লাগে না। মোহিনীর জন্য মাছ মাংস রাঁধিতে রাঁধিতে উন্মনা হইয়া চোখের জল সে ফেলিয়াছিল কার জন্য?
বিধান আসিয়াছে। আর শ্যামার দুঃখ নাই। পৃথিবীতে শরৎ আসিয়াছে হাসির মত, এতদিন শ্যামা হাসিতে পারে নাই। এবার শ্যামার মুখেও হাসি ফুটিয়াছে।
পরদিন বকুলকে বিদায় দিয়াও শ্যামার মুখ তাই বেশিক্ষণ ম্লান রহিল না। রান্না ঘরে গিয়া তার কাছে পিঁড়ি পাতিয়া বিধান বসিতে না বসিতে কখন যে সে ভুলিয়া গেল মেয়ের বিরহ।
নয়
শ্যামার মনে আবার নিবিড় হইয়া আর্থিক দুর্ভাবনা ঘনাইয়া আসিয়াছে।
এবার আর কোনদিকে সে উপায় দেখিতে পায় না। আগে দুরবস্থায় পড়িয়া একটা ভরসা সে করিতে পারিত, বাড়িটা বিক্রয় করিয়া দিলে মোটা কিছু টাকা পাওয়া যাইবে। এখন সে ভরসাও নাই। বাড়ি বিক্রীর অতগুলি টাকা কেমন করিয়া নিঃশেষ হইয়া গেল? অপচয় করিয়াছে নাকি সে? হয়ত আরও হিসাব করিয়া খরচ করা উচিত ছিল। এক সঙ্গে অনেকগুলি টাকা হাতে পাইয়া নিজেকে হয় তো সে বড়লোক ঠাওরাইয়াই বসিয়াছিল।
তবে, একথা সত্য যে এ ক'বছর একটি পয়সাও ঘরে আসে নাই। ফোঁটা ফোঁটা করিয়া ঢালিলেও কলসীর জল একদিন শেষ হইয়া যায়। বিধানের পড়ার খরচও কি সহজ! বকুলের বিবাহেও ঢের টাকা লাগিয়াছে।