পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৬৩

 বিভা বলে, ও।

 শ্যামার একদিকের প্রতিবেশিরা এমনি। নিচের তলার বাড়িওলা তাদের মতই ঘরোয়া গৃহস্থ মানুষ, সরযূদের মত উড়ু উড়ু পাখী নয়। শ্যামার মত তাদেরও ছোট-ছেলের-গন্ধভরা ছেঁড়া লেপতোষক! কর্তা ছিলেন আদালতের পেস্কার, পেনসন লইয়া এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন। প্রতি মাসের দুই তারিখে সকালবেলা ভাড়ার রসিদ হাতে সিঁড়ির শেষ ধাপে উঠিয়া ডাকেন, বিধানবাবু! নেত্যবাবু! আছেন না কি?

 বাড়িওলার ছেলেমেয়ে বৌ নাতিনাতনিতে একতলাটা বোঝাই হইয়া থাকে,—ক'খানা মাত্র ঘর, কি করিয়া ওদের কুলায় কে জানে। তিনটি বিবাহিত পুত্রকে তিনখানা ঘর ছাড়িয়া দিলে বাকি সকলে থাকে কোথায়? বাকি ঘর তো থাকে মোটে একখানি। কর্তা গিন্নি, একটি বিধবা মেয়ে, ছোট মেয়ে আর মেয়ের জামাইও এখানে থাকে তারা, পেটেণ্ট ওষুদের ক্যানভাসার ভাইপোটি, সকলে ওই একখানা ঘরে থাকে নাকি? প্রথমটা শ্যামার বড় দুর্ভাবনা হইত। তারপর একদিন রাত্রে রাঁধিয়া বাড়িয়া বাড়িওলা গিন্নির সঙ্গে খানিক আলাপ করিতে গিয়া সে ব্যাপার বুঝিয়া আসিয়াছে। বড় দু'খানা ঘরের প্রত্যেকটির মাঝামাঝি এ দেয়াল হইতে ও দেয়াল পর্যন্ত তার টাঙ্গানো আছে, তাতে ঝুলানো আছে ছিটের পর্দা। দিনের বেলা পর্দা গুটানো থাকে, রাত্রে পর্দা টানিয়া দু'খানা ঘরকে চারখানা করিয়া তিন ছেলে আর মেয়ে-জামাই শয়ন করে। পর্দার উপরে একটি বিদ্যুতের বাতি জ্বালিয়া দু'দিকের দম্পতিকে আলো দেয়।

 সিঁড়ির নিচে যে স্থানটুকু আছে ক্যানভাসার ভাইপোটি সেখানে থাকে। নাম তাহার বনবিহারী। সিঁড়ির উপরে রেলিং ঘেঁষিয়া দাঁড়াইলে নিচে বনবিহারীকে দেখিতে পাওয়া যায়। সারাদিন বাহিরে বাহিরে ঘুরিয়া রাত্রি আটটা ন'টার সময় সে ফিরিয়া আসে। ওষুধের সুটকেশটি চৌকির নিচে ঢুকাইয়া জামাটি খুলিয়া সে পেরেকে টাঙ্গাইয়া দেয়, কাপড় গায়ে দিয়া চৌকিতে বসিয়া জুতার ফিতা খোলে। তারপর চৌকিতে পা তুলিয়া নিজের পা টিপিতে আরম্ভ করে নিজেই। হঠাৎ বাড়িওলা গিন্নি ডাক দেয়, বনু এলি, বনু? পাঁউরুটি আনা হয় নি, ভোলা তুলে এসেছে, যা তো বাবা মোড়ের