বসিয়া আয়াস করিতে পারে! কিন্তু কেন যেন বৌকে আনিবার ইচ্ছা শ্যামার হয় না। না আনিলে অবশ্য চলিবে না, ছেলের বৌকে কি বাপের বাড়ি ফেলিয়া রাখা যায় চিরদিন? যাক্ দু'দিন যাক্।
একদিন বিধান আপিস গিয়াছে, কোথা হইতে রঙীন খাম আসিল একখানা, আকাশের মত নীল রঙের! শ্যামা অবাক হইয়া গেল। এর মধ্যে চিঠি লিখিতে সুরু করিয়াছে বৌ? ওদের ভাব হইল কবে? ক'দিনের বা দেখা-শোনা! বিধান লুকাইয়া লুকাইয়া যায় না তো শ্বশুরবাড়ি? নিজের মনে শ্যামা হাসে। লুকাইয়া শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার ছেলেই বটে তার! কি লিখিয়াছে বৌ? চিঠিখানা সে বিধানের মশারির উপর রাখিয়া দিল।
বিধান আসিলে বলিল, তোর একখানা চিঠি এসেছে খোকা, রেখে দিয়েছি মশারির ওপোর।
বিধান চিঠি পড়িয়া পকেটে রাখিয়া দিল।
বাগবাজারের চিঠি বুঝি? ওরা ভাল আছে?—শ্যামা জিজ্ঞাসা করিল।
বিধান বলিল, আছে।
ছেলের সংক্ষিপ্ত জবাবে শ্যামা যেন একটু রাগ করিয়াই সরিয়া গেল।
কয়েকদিন পরে একটা ছুটির দিনে শ্যামা একটু বিশেষ আয়োজন করিয়াছিল রান্নার। রাঁধিতে রাঁধিতে অনেক বেলা হইয়া গেল। রান্নাঘরের ভিতরটা অসহ্য গরম, শ্যামা যেই বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে ওমনি মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া গেল। সামান্য ব্যাপার, মূর্ছাও নয়, সন্ন্যাস-রোগও নয়, মাথায় একটু জলটল দিতেই শ্যামা সুস্থ হইয়া উঠিয়া বসিল। বিধান কিন্তু তাহাকে সেদিন আর উঠিতে দিল না, শোয়াইয়া রাখিল। বিকালে বিধান বাহির হইয়া গেল। রাত্রি আটটার সময় ফিরিয়া আসিল সুবর্ণকে সঙ্গে করিয়া।
বিধানের নিষেধ অমান্য করিয়া শ্যামা তখন রাঁধিতে গিয়াছে। সুবর্ণ প্রণাম করিতে সে একেবারে উত্তেজিত হইয়া উঠিল।
একি রে খোকা? বলা নেই কওয়া নেই বৌমাকে নিয়ে এলি যে তুই? জিজ্ঞেস করা দরকার মনে করলি নে বুঝি একবার?
এরকম অভ্যর্থনার জন্য বিধান প্রস্তুত ছিল না। সে চুপ করিয়া