পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৯৩

যাইতে চায় না, এখানে থাকিতে পারিলেই খুসি হইত। শ্যামা নির্বিবাদে ভাবিয়া বসিল, এ'টান বিধানের জন্য—সে যা ব্যবহার করিয়াছে তার জন্য সুবর্ণের কিসের মাথাব্যথা?

 পূজার পরেই আমায় আনবেন মা।—সুবর্ণ সজল চোখে বলিয়া গেল।

 শ্যামা শুধু বলিল, আনব।

 বিধানের বৌ! সে বাপের বাড়ি যাইতেছে। বুকে জড়াইয়া একটু তো শ্যামা কাঁদিতে পারিত? কিন্তু কি করিবে শ্যামা, যাওয়ার জন্য সুবর্ণ তখন সাজগোজ করিয়াছে, বৌএর সে চোখ ঝলসানো মূর্তির দিকে শ্যামা চাহিতে পারিতেছিল না, মনে হইতেছিল, যাক্, ও চলিয়া যাক্, দু'দিন চোখ দু'টা একটু জুড়াক শ্যামার।

 পূজার সময় মন্দা আসিয়া কয়েকদিন রহিল। শীতলকে দেখিতে আসিয়াছে। মন্দার জন্য সুবর্ণকেও দু'দিন আনিয়া রাখা হইল। সুবর্ণ ফিরিয়া গেলে একদিন মন্দা বলিল, হ্যাঁ বৌ, একটা কথা বলি তোমায়, ভাল করে তাকিয়ে দেখেছ বৌমার দিকে? আমার যেন সন্দেহ হ'ল বৌ।

 শ্যামা চমকাইয়া উঠিল। তারপর হাসিয়া বলিল, না ঠাকুরঝি, ও তোমার চোখের ভুল।

 মন্দার চোখের ভুলকে শ্যামা কিন্তু ভুলিতে পারিল না, দিবারাত্রি মনে পড়িতে লাগিল সুবর্ণকে আর মন্দার ইঙ্গিত। কি বলিয়া গেল মন্দা? সত্য হইলে শ্যামা কি অন্ধ, তার চোখে পড়িত না? শ্যামা বড় অন্যমনস্ক হইয়া গেল। সংসারের কাজে বড় ভুল হইতে লাগিল শ্যামার। কি মন্ত্র মন্দা বলিয়া গিয়াছে, সুবর্ণকে দেখিবার জন্য শ্যামার মন ছটফট করে, সে ধৈর্য ধরিয়া থাকিতে পারে না। একদিন মণিকে সঙ্গে করিয়া সে চলিয়া গেল বাগবাজারে। মন্দার মন্ত্র কি শ্যামার চোখে অঞ্জনও পরাইয়া দিয়াছে? কই, সুবর্ণের দিকে চাহিয়া এবার তো শ্যামার চোখ পীড়িত হইয়া উঠিল না?

 শ্যামা বলিয়া আসিল, সামনের রবিবার দিন ভাল আছে, ওইদিন বিধান আসিয়া সুবর্ণকে লইয়া যাইবে। না, তাকে বলা মিছে, বৌকে সে আর বাপের বাড়ি ফেলিয়া রাখিতে পারিবে না।

 ১৩