পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
জননী

পড়িয়া কারো উপর নির্ভর করিবার জন্য সে মরিয়া যাইতেছিল, আজ বিপদ কাটিয়া যাওয়ার পর কিছু আত্মমর্যাদার প্রয়ােজন হইয়াছে।



তিন

কয়েক বৎসর কাটিয়াছে।

 শ্যামা এখন তিনটি সন্তানের জননী। বড়খােকার দু'বছর বয়সের সময় তাহার একটি মেয়ে হইয়াছে, তার তিন বছর পরে আর একটি ছেলে। নামকরণ হইয়াছে তিনজনেরই—বিধানচন্দ্র, বকুলমালা ও বিমানবিহারী। এগুলি পােষাকি নাম। এ ছাড়া তিনজনের তিনটি ডাকনামও আছে, খােকা, বুকু ও মণি।

 ওদের মধ্যে বকুলের স্বাস্থ্যই আশ্চর্য রকমে ভাল। জন্মিযা অবধি একদিনের জন্য সে অসুখে ভােগে নাই। মােটা মােটা হাত পা, ফোলা ফোলা গাল,—দুরন্তের একশেষ। শ্যামা তাহার মাথার চুলগুলি বাব্‌রি করিয়া দিয়াছে। খাটো জাঙ্গিয়া-পরা মেয়েটি যখন একমুহূর্ত স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া ঝাঁকড়া চুলের ফাঁক দিয়া মিটমিট করিয়া তাকায়, দেখিলে চোখ জুড়াইয়া যায়। বুকুর রঙও হইয়াছে বেশ মাজা। রৌদ্রোজ্জ্বল প্রভাতে তাহার মুখখানা জ্বলজ্বল করে, ধূসব সন্ধ্যায় স্তিমিত হইয়া আসে—সারাদিনের বিনিদ্র দুবন্তপনার পর নিদ্রাতুর চোখ দুটির সঙ্গে বেশ মানায়। কিন্তু দেখিবার কেহ থাকে না। শ্যামা রান্না করে, শ্যামার কোল জুড়িয়া থাকে ছােট খােকামণি। বুকু পিছন হইতে মার পিঠে বুকের ভর দিয়া দাঁড়াইয়া থাকে। মার কাঁধেr উপর দিয়া ডিবরির শিখাটির দিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে তাহার চোখ বুজিয়া যায়। শ্যামা পিছনে হাত চালাইয়া তাহাকে ধরিয়া রাখিয়া ডাকে, খোকা, অ খােকা!