ফিরো দিকি একটু সকাল সকাল রোজ? শ্যামা আঁচল বিছাইয়া শ্রান্ত দেহ মেঝেতে এলাইয়া দেয়, বলে, তুমি থাকলে ওদেরও ভাল লাগে, সন্ধ্যাবেলা তােমায় দেখতে না পেলে বুকু তাে আগে কেঁদেই অস্থির হত।
শীতল আগ্রহ গােপন করিয়া জিজ্ঞাসা করে, আজকাল কাঁদে না?
আজকাল ভুলে গেছে। হ্যাঁগাে, মুদী দোকানে টাকা দাও নি?
দিয়েছি।
মুদী আজ সত্যভামাকে তাগিদ দিয়েছে। তামাক পুড়ে গেছে, এবার রাখাে,—দেব আরেক ছিলিম সেজে?
শীতল বলে, না থাক।
আবােল তাবােল খরচ করে কেন যে টাকাগুলাে নষ্ট কর, দোতলায় একখানা ঘর তুলতে পারলে একটা কাজের মত কাজ হত। টাকা উড়িয়ে লাভ কি?
তারপর তাহারা ঘরে যায়। মণি আর বুকুর মাঝখানে শ্যামা শুইয়া পড়ে। বিধান একটা স্বতন্ত্র ছােট চৌকীতে শোয়। শােয়ার আগে একটি বিড়ি খাইবার জন্য শীতল সে চৌকীতে বসিবামাত্র বিধান চীৎকার করুয়া জাগিয়া যায়। শীতল তাড়াতাড়ি বলে, আমি তে থােকা আমি। ভয় কি?—বিধান কিন্তু শীতলকে চায় না। সে কাঁদিতে থাকে।
শ্যামা বলে, আয় খােকা আমার কাছে আয়।
সে রাত্রে ব্যবস্থা উল্টাইয়া যায়। শীতলের বিছানায় শােয় বিধান। বিধানের ছােট্ট চৌকীটিতে শীতল পা মেলিতে পারে না। একটা অদ্ভুত ঈর্ষার জ্বালা বােধ করিতে করিতে সে মা ও ছেলের আলাপ শােনে।
স্বপন দেখেছিলি না রে খােকা?
কিসের স্বপন রে?
ভুলে গেছি মা।
খুকীর গায়ে তুমি যেন পা তুলে দিও না বাবা।
কি করে দেব? পাশ বালিশ আছে যে?
তুই যে পাশ বালিশ ডিঙ্গিয়ে আসিস। বালিশের তলে কি হাতড়াচ্ছিস?