পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৭৫

 বললে কি আর তুমি যেতে দিতে? যাবার জন্য কাঁদাকাটা করতে লাগল, তাই পাঠিয়ে দিলাম।

 হঠাৎ বনগাঁ যাবার জন্য ও কাঁদাকাটা করল কেন?

 কাল পরশু ফিরে আসবে।

 ঝোঁকের মাথায় কাজটা করিয়া ফেলিয়া শ্যামার বড় আর অনুতাপ হইতেছিল, সে আবার বলিল, পাঠিয়ে অন্যায় করেছি। আর করব না।

 শীতলের কাছে ত্রুটি স্বীকার করিতে আজকাল শ্যামার এমন বাধ’ বাধ’ ঠেকে! নিজে চারিদিকে সব ব্যবস্থা করিয়া করিয়া স্বভাবটা কেমন বিগড়াইয়া গিয়াছে, কোন বিষয়ে কারো কাছে যেন আর নত হওয়া যায় না। আর বকুলকে এমনভাবে হঠাৎ বনগাঁয়ে পাঠাইয়াও দিয়াছে তো এই কারণে, মেয়ের উপর অধিকার জাহির করিতে। কাজটা যে বাড়াবাড়ি হইয়া গিয়াছে, ওরা রওনা হইয়া যাওয়ার পরেই শ্যামার তাহা খেয়াল হইয়াছে।

 শীতল কিন্তু আজ চেঁচামেচি গালাগালি করিল না, করিলে ভাল হইত, ছড়ি দিয়া শ্যামাকে অমন করিয়া হয়ত সে তাহা হইলে মারিত না। মাথায় ছিটওলা মানুষ, যখন যা করে একেবারে চরম করিয়া ছাড়ে। শ্যামার গায়ে ছড়ির দাগ কাটিয়া কাটিয়া বসিয়া গেল।

 মারিয়া শীতল বলিল, বজ্জাত মাগী, তোকে আমি কি শাস্তি দিই দেখ। এই গেল এক নম্বর। দু’ নম্বর শাস্তি তুই জন্মে ভুলবি না।

 শাস্তি? আবার কি শাস্তি শীতল তাহাকে দিবে? তাহার স্বামী?

 বিবাহের পরেই শ্যামা টের পাইয়াছিল শীতলের মাথায় ছিট আছে। পাগলের কাণ্ডকারখানা কিছু বুঝিবার উপায় নাই। পরদিন দশটার সময় নিয়মিতভাবে স্নানাহার শেষ করিয়া শীতল আপিসে গেল। বারটা একটার সময় ফিরিয়া আসিল। শ্যামাকে আড়ালে ডাকিয়া তাহার হাতে দিল একতাড়া নোট। শ্যামা গুণিয়া দেখিল, এক হাজার টাকা। এ কেমন শাস্তি? শীতল কি করিয়াছে, কি করিতে চায়?

 এ কিসের টাকা?—শ্যামা রুদ্ধশ্বাসে জিজ্ঞাসা করিল।

 শীতল বলিল, বাবু বোনাস দিয়েছেন। পরশু লাভের হিসাব হ’ল