পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৭৭

 শ্যামা বলিল, কি কাণ্ড সে করে গেছে মামা, সেই জানে। কাল অসময়ে আপিস থেকে ফিরে আমায় হাজার টাকার নােট দিয়ে গেল। বললে, আপিস থেকে বােনাস দিয়েছে। কাল তাে বুঝতে পারিনি মামা, হঠাৎ অত টাকা বােনাস দিতে যাবে কেন, লাভের যা কমিশন পাবার সে তাে ও পায়?

 শ্যামার কিছু ভাল লাগে না, বুকের মধ্যে কি রকম করিতে থাকে, কিসে যেন চাপিয়া ধরিয়াছে বুকটা। কাজ করিয়া করিয়া এমন অভ্যাস হইয়া গিয়াছে যে অন্যমনে কলের মত তাহা করিয়া ফেলা যায় তাই, না হইলে শ্যামা আজ শুইয়া থাকিত, সংসার হইত অচল। নটার সময় মিস্ত্রিরা কাজ করিতে আসিল, ঘর প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে, আর সাত দিনের মধ্যে ঘর ব্যবহার করা চলিবে। বিধান খাইয়া স্কুলে গেল। মামাও সকাল সকাল খাইয়া, দেখি একটু খোঁজ করে, বলিয়া চলিয়া গেল। বাড়িতে রহিল শুধু শ্যামা আর তাহার দুই শিশুপুত্র, মণি ও ছােটখােকা,—যার নাম ফণীন্দ্র রাখা ঠিক হইয়াছে।

 দুপুর বেলা প্রেসের একজন কর্মচারীর সঙ্গে শীতলের মনিব কমলবাবু আসিলেন। রাণীকে দিয়া পরিচয় পাঠাইয়া শ্যামার সঙ্গে দরকারি কয়েকটা কথা বলার ইচ্ছা জানাইলেন। তারপর নিজেই হাঁকিয়া শ্যামাকে শুনাইয়া বলিলেন, তিনি বুড়াে মানুষ, শীতলকে ছেলের মত মনে করিতেন, তাঁর সঙ্গে কথা কহিতে শ্যামার কোন লজ্জা নাই। লজ্জা শ্যামা এমনিই করিত না, ঘােমটা টানিয়া সে বাহিরের ঘরে গেল। রাণী সঙ্গে গিয়াছিল, কমলবাবু বলিলেন, তােমার ঝিকে যেতে বল মা।

 রাণী চলিয়া গেলে বলিলেন, শীতল ক’দিন বাড়ি আসেনি মা?

 শ্যামা বলিল, বুধবার আপিসে গেলেন, তারপর আর ফেরেন নি।

 ওইদিন একটার সময় শীতল যে বাড়ি ফিরিয়া তাহাকে টাকা দিয়া গিয়াছিল, শ্যামা সে কথা গােপন করিল।

 একবারও আসেনি, দু’এক ঘণ্টার জন্য?

 না।

 তােমায় টাকাকড়ি কিছু দিয়ে যায় নি?

 না।