পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৮৩

আব্দার করিয়া ঘুরিত। কে এখন জামায় তাহার সাবান দিয়া দেয়? কে চুলের বিনুনি করে? বকুলের মুখে কত ধূলা না জানি লাগে, আঁচল দিয়া সে শুধু মুখটি মুছিয়া ফেলে, কে দিবে তাহাকে সফেদা, কে দিবে দুধের সর।

 দিন তিনেক পরে মামা আসিল। বলিল, সার্চ করে গেছে? করে নি? ব্যাপার তবে কিছু বোঝা গেল না শ্যামা, কি মতলব যেন করেছে কমলবাবু, আঁচ করে উঠতে পারছি না।

 শ্যামা বলিল, টাকাটার কোন ব্যবস্থা করে তুমি এসে থাকতে পার না মামা এখানে? এই পুলিস আসে, এই পুলিস আসে করে ভয়ে ভয়ে থাকি, এসে তারা কি করবে কি বলবে কে জানে, মার ধোর করে যদি জিনিসপত্র যদি নিয়ে চলে যায়?

 মামা একগাল হাসিয়া বলিল, থাকব বলেই তো টাকার ব্যবস্থা করে এলাম রে।

 কোথায় রেখেছ?

 তুই চিনবিনে, মস্ত জমিদার। নতুন কাপড়ের পুলিন্দে করে সিলমোহর এঁটে জমা দিয়েছি। বলেছি গাঁয়ে আমার বাড়ি ঘর আছে না, তার দলিলপত্র, ঘুরে ঘুরে বেড়াই, হারিয়ে টারিয়ে ফেলব। তোমার সিন্দুকে যদি রেখে দাও বাবা? বড় ভক্তি করে আমায়। বলে, যোগ তপস্যা সব ছেড়ে দিলেন, নইলে আপনি তো মহাপুরুষ ছিলেন, দীক্ষা নেব ভেবেছিলাম আপনার কাছে। জানিস মা, পিঠের ব্যথাটা আবার চাগিয়েছে, ব্যথায় কাল ঘুম হয় নি।

 রাণী একটু মালিশ করে দিক?—শ্যামা বলিল।

 দশ বার দিন কাটিয়া গেল। বিষ্ণুপ্রিয়া একদিন শ্যামাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিল। রাগারাগি করিয়া মেয়ে লইয়া শীতল চলিয়া গিয়াছে এই পর্যন্ত শ্যামা তাহাকে বলিয়াছে, টাকা চুরির কথাটা উল্লেখ করে নাই। বিষ্ণুপ্রিয়া সমবেদনা দেখাইয়াছে খুব। বলিয়াছে, ভেবে ভেবে রোগা হয়ে গেলে যে, ভেবো না, ফিরে আসবে। বাড়িঘর ছেড়ে ক দিন আর থাকবে পালিয়ে? তারপর ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিয়াছে, সংসার খরচের টাকাকড়ি রেখে