পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৯
বায়ুরোগ 

হিংসের চোখে দেখতে লাগল, ক্রমে আমার কাছে চুপি চুপি লোক হাঁটতে শুরু করলে আমায় ভাঙ্গিয়ে নেবার জন্যে। বেশি মাইনে দিতে চায়, নানারকম সুবিধে করে দিতে চায়। আমি কিছুতেই গেলাম না। জরীপের হেড্ কানুনগো কুড়ি টাকা পর্যন্ত মাইনে দিতে চাইলে, আমি তখন পাই মোটে সাত টাকা। কিন্তু টাকার সুবিধের কথা আমার মনেই উঠল না। আমার মনিবকে ত আমি এই সব কথা কিছু বলতাম না।

 মাস পাঁচ-ছয় পরে কি জানি কেমন কুবুদ্ধি হ’ল মনিবের, আমায় অকারণে বকুনি গালাগালি শুরু করলে। আগেও যে একেবারে না বকতো এমন নয়, কিন্তু তাতে মাত্রা থাকতো। পুরোনো হওয়াতে মনিব বোধ হয় ভাবতে লাগল আমার আর যাবার জায়গা নেই—কাজেই কারণে অকারণে গাল-মন্দ ক্রমেই মাত্রা ছাড়িয়ে উঠতে লাগল।

 একদিন মনিব আমায় ডেকে বললেন—শোন এদিকে। আলুতে বালি দিয়ে রাখোনি কেন? সব যে কল্ বেরিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েচে—

 সন্ধ্যার কিছু আগে। আমি আধ মাইল দূরবর্তী দোকান থেকে সবেমাত্র তেল, মসলা কিনে ফিরে এসেচি। বললাম—বালি তো দেওয়াই ছিল, বর্ষাকালে বালি দিলেও কি কল্ বেরুনো সামলানো যায় বাবু?

 মনিব হঠাৎ চটে উঠে বললে—কি পাজি! রাস্কেল্, আমার সঙ্গে মুখোমুখি উত্তর?

 ব’লেই আমায় মারলে দু’টো চড়। তারপর গটগট করে বাইরে চলে গেল।