পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/১০৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
গান্ধীজী ও নেতাজী
৬৫

প্রীতি, তাহার উপরে জৈনধর্ম্মের প্রভাব, এবং তাহারও উপরে, তাঁহার রক্তগত বৈশ্য-বুদ্ধি। ইহার কোনটাই জাগতিক ব্যাপারে উচ্চ উদ্দেশ্য-সিদ্ধির অনুকূল নয়। ভারতীয় অধ্যাত্মসংস্কারে একরূপ বৈরাগ্যই স্বাভাবিক,―জাগতিক যতকিছু অহিত বা অমঙ্গল, তাহা শেষ পর্য্যন্ত এমন কিছু নয়, যাহার জন্য, সেই আত্মার স্বাস্থ্যহানি করা যাইতে পারে। জৈনধর্ম্ম বৌদ্ধধর্ম্মের প্রায় সগোত্র, তাহাতে সর্ব্বপ্রকার হিংসাই পাপ―অহিংসা বা non-resistance-ই ধর্ম্ম; শক্তির বিরুদ্ধে শক্তির প্রয়োেগ অপেক্ষা আত্মদমন বা নিবৃত্তিমূলক প্রতিরোধই কল্যাণকর; আঘাত যদি প্রতিঘাত না পায় তবেই সকল আঘাত আপনিই নিরস্ত হইবে, অমঙ্গলের জড় নষ্ট হইয়া যাইবে। ইহাই কোন এক যুগের ভারতীয় তত্ত্বচিন্তার ফল; এ চিন্তার মূলে আছে সৃষ্টিকে এক রূপ অস্বীকারের দ্বারা নির্ব্বিষ অর্থাৎ নিঃসত্ত্ব করিয়া তোলা। ইহার ফল কি হইতে পারে, ভারতের ইতিহাসও তাহার কতক পরিমাণ সাক্ষ্য দিবে; এবং জাগতিক ব্যাপারে ইহাকে সম্ভব করিয়া তোলা সম্ভব কিনা, মানুষের ইতিহাস এবং মানুষের সহজ বুদ্ধি তাহা বলিয়া দিবে। ইহাও মনে রাখিতে হইবে যে, ঐ তত্ত্বই ভারতীয় মনীষা বা সাধনার একমাত্র তত্ব নয়, উহা একটা আংশিক তত্ত্ব মাত্র, বরং প্রধান চিন্তাধারার বিরোধী; যদিও গীতা হইতে শঙ্কর-দর্শন পর্য্যন্ত, তথা ভারতীয় হিন্দুসাধারণের ধর্ম্মীয় চেতনায়, বৌদ্ধদর্শনের প্রভাব আজিও প্রচ্ছন্ন,―এমন কি, কোন কোন সমাজে প্রবল হইয়া আছে।