ইহা যাহারা বুঝিবে না, তাহাদের প্রত্যেককে মহাত্মা গান্ধী হইতে হইবে, অন্যথা অন্ধ অথবা ভণ্ড না হইয়া উপায় নাই। আসল কথা, ভারতের তথাকথিত স্বাধীনতার জন্য গান্ধীজী খুব বেশী চিন্তিত নহেন; ইংরেজকে বিশ্বাস করিতেই হইবে, বিশ্বাস করতে পারিলেই ঐ অহিংসা ও সত্যাগ্রহের বলে অনেক পথ খুলিয়া যাইবে; সে পধ সংগ্রামের পথ নয়, মৈত্রীর পথ; তাহাতে স্বাধীনতা লাভ না হউক, যাহা প্রকৃত কল্যাণ তাহাই লাভ হইবে। এই যে দুঃস্থ ও দুর্গতগণের দুঃখমোচন―ইহার তুল্য ধর্ম্ম নাই; কেবল স্বাধীনতা-লাভ বলিতে লোক যাহা চায় তাহাও একটা পাপ-প্রবৃত্তি, প্রকৃত স্বাধীনতা ঐ হিতসাধনের স্বাধীনতা―ইংরেজ এ দেশে থাকা সত্ত্বেও সেই স্বাধীনতার যথেষ্ট অবকাশ আছে। তাহার সাধনপ্রণালী বা কর্ম্মপদ্ধতিও তিনি নির্দ্ধারণ করিয়া দিয়াছেন। উহা পালন করতে পারলেই চতুর্ব্বর্গ লাভ হইবে। ঐ ধর্ম্ম এমনই যে, উহাতে নিষ্ফলতার আশঙ্কাও নাই, কারণ― “নেহাভিক্রমনাশোহস্তি প্রত্যবায়ো ন বিদ্যতে। স্বল্পমপ্যস্য ধর্ম্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ।” আমার মনে হয়, ইহাই গান্ধী-ধর্ম্মের ও গান্ধী-কর্ম্মের সারতত্ত্ব―ইহা বুঝিয়া লইতে পারিলে গান্ধী-কংগ্রেসের কোথাও প্রত্যবায় দেখা যাইবে না। ভুল আমরাই করিয়াছি, আমরা সেই বিলাতী আদর্শের স্বাধীনতাকেই পরমপুরুষার্থ বলিয়া স্থির করিয়াছি, অথচ তাহার জন্য গান্ধী-নীতিকেই বরণ করিয়াছি—না করিয়া উপায় নাই; এজন্য, আমাদেরও যেমন, গান্ধীজীরও তেমনই বিড়ম্বনার অন্ত নাই।
পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/১১০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
জয়তু নেতাজী