পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
জয়তু নেতাজী

সাধনায় মধ্যযুগের সেই ভজন-সাধনও যেমন নাই, তেমনই বৌদ্ধবেদান্তের শূন্যমার্গও নাই, সেখানে সে তান্ত্রিক, অর্থাৎ, তত্ত্ব ও তথ্য উভয়ের সমান উপাসক। বাঙালী কখনও রাজ্যেশ্বর হইতে চাহে নাই (বাঙালী জাতি হইতে কোন বৃহৎ রাজবংশের উদ্ভব নয় নাই), সে বাণিজ্যের দ্বারা জাতির ধনবৃদ্ধিও করে নাই। তথাপি সে ত্যাগী সন্ন্যাসী নয়, সে ভোগের মধ্যেই বন্ধন-মুক্তির স্বাধীনতা চাহিয়াছে। সেজন্য জীবনকে অতিশয় সহজ ও সরল করিয়া সে সেই শক্তির সাধনা করিয়াছে―যে-শক্তি সহজে ও সরলে আনন্দরূপিণী। তাহার সেই স্বাধীনতা দম্ভ বা অভিমানের বস্তু ছিল না, সেই স্বাধীনতা লোভই সে দারিদ্র্যকে জয় করিয়াছিল, ধনের প্রভুত্ব স্বীকার করে নাই তাহাব ভূমি তাহাকে যে শস্য দেয় তাহার অধিক সে চাহে নাই―কেবল তাহাই সে স্বাধীন ভাবে ভোগ করিয়াছে। এই বাঙালীর সহিত ইংরেজের ঘনিষ্ঠতাও যেমন সহজ হইয়া ছিল, সংঘর্ষও তেমন দারুণ হইতে বাধ্য। সে তাহাকে ভুলাইয়া তাহার ধর্ম্মনাশ করিয়াছে, তাহার সেই হাজার বৎসরের স্বল্পে-সন্তুষ্ট শান্তিময় জীবনযাত্রা উৎসাদিত করিয়াছে ―এমন আঘাত ভারতবর্ষে আর কোথাও সে করে নাই। বাঙালীর রাজ্য-পিপাসা ছিল না,[১] ধন

  1. বাংলার প্রাচীন রাজবংশগুলি প্রায় সকলই অবাঙ্গালী, তাহাদের রাজত্বকালেও― পরবর্ত্তী কালের বিদেশী রাজাদের আমোলে যেমন, ঠিক তেমনই ভাবে রাজাকে দূর হইতে ভক্তি করিয়া ও রাজ কর দিয়া, এ জাতি পরিবারে ও সমাজে আপন স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়াছে―তাহার ধর্ম্ম ও সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ণ ও অব্যাহত রাখিয়াছে।