পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গান্ধীজী ও নেতাজী
৮৭

একজনেরও মোহভঙ্গ হয়, কেবল একজন মুক্ত হয়, তবে তাহার সঙ্গে সঙ্গে আর সকলেও মুক্ত হইবে—আমাদের বেদান্তদর্শনের এই তত্ত্বটিই যেন আর এক ক্ষেত্রে, আর এক অর্থে প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিয়াছে! বেদান্ত বলেন, রাম, কৃষ্ণ, কেহই মুক্ত হন নাই—হইলে সঙ্গে সঙ্গে জগৎ মুক্ত হইয়া যাহত, কারণ ব্রহ্মরূপী সেই এক জীব মুক্ত হইলে—তাহার মোহ-স্বপ্ন ভঙ্গ হইলে সেই স্বপ্নের অন্তর্গত সকল জীবেরই মুক্তি হইবে, সকলেই সেই স্বপ্নদ্রষ্টা ব্রহ্মে বিলীন হইয়া যাইবে। এই তত্ত্ব ঘোর উচ্চাধিকারের তত্ত্ব,ইহা বুঝিবার বা বিশ্বাস করিবার সামর্থ্য আমাদের নাই। কিন্তু আজ একি দেখিতেছি? সেই তত্ত্বই নিম্নাধিকারের ভূমিতে, মানবজীবনের জবানীতেই যেমন সত্য, তেমনই বোধগম্য হইয়া উঠিয়াছে। এখানে সেই এক জীব সুভাষচন্দ্র, একা তাঁহারই মোহভঙ্গ হইয়াছে, তিনিই মুক্তিকে অপরোক্ষ করিয়াছেন, ভারতবর্ষে আর কেহ তেন করে নাই। কিন্তু তাহারই ফলে একি দৃশ্য। সেই এক মুক্ত-জীবেব অপূর্ব্ব উৎসাহ ও উল্লাস শত শত জীবকে বন্ধনমুক্ত করিতেছে পঙ্গুকে গিরিলঙ্ঘন করাইতেছে। এ যেন সেই একটি ক্ষুদ্র দীপ-শলাকা কক্ষব্যাপী অন্ধকার নিমিষে দূর করিয়াছে, এ যেন সেই এক খ্রীষ্ট্রের আত্মবলিদানে সর্ব্বজীবের মুক্তিলাভ। না, বেদান্ত মিথ্যা বলে নাই; আমরাই ক্ষুদ্র, আমরাই অবোধ, আমাদেরই বিশ্বাস নাই।

 এই মোহভঙ্গই সবচেয়ে বড় কথা। আধুনিক ভারতে সুভাষচন্দ্র ভিন্ন আর কাহারও যে মোহভঙ্গ হয় নাই, ইহা অতিশয় সত্য